দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এতদিন ধারণা করা হচ্ছিলো যে সারা বিশ্ব যেখানে করোনা মহামারীর করাল গ্রাসে তখন একমাত্র আন্দামানের বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করা মানুষ গুলো হয়তো এযাত্রায় বেঁচে গেলো, কিন্তু সে ধারণা এবার মিথ্যে প্রমানিত হলো। ক্রমহ্রাসমান ভারতের গ্রেট আন্দামানীয় উপজাতির দশজন সদস্য করোনা ভাইরাস পজিটিভ ধরা পরেছেন। কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বলেছেন, প্রত্যন্ত দ্বীপপুঞ্জে এই দল এবং অন্যান্য আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তাদের বাড়িতে রাখা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উদ্বেগ এই কারণে যে মাত্র ৫০ জন গ্রেট আন্দামানবাসী আজ বেঁচে আছেন এবং তারা এই ক্ষুদ্র স্ট্রেইট দ্বীপে বাস করে যেখানে সরকার তাদের খাদ্য এবং আশ্রয়ের দৈনন্দিন দেখাশোনা করে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জর সম্মিলিত জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ এখন পর্যন্ত ২,২৬৮ টি করোনাভাইরাস কেস রিপোর্ট হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। সম্প্রতি এই দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে উপজাতির ৬ জন সদস্য পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ রবিবার স্ট্রেইট দ্বীপে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একটি দল পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে উপজাতির কিছু সদস্য পোর্ট ব্লেয়ার ভ্রমণ করেন যেখানে তাদের সরকারী চাকুরী আছে আর সেই কর্মস্থল থেকেই হয়তো তাদের সংক্রমণ হয়েছে।
আন্দামানের রোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় জানান “দলটির ৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং গ্রেট আন্দামানীয় উপজাতির ৪ জন সদস্যকে পজিটিভ হতে দেখা গেছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।” আদিবাসী কল্যাণের একজন ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা সঞ্জীব মিত্তল জানান, সকল সদস্যকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
দ্য গ্রেট আন্দামানবাসীরা অত্যন্ত অসুরক্ষিত
উল্লেখ্য, বিচ্ছিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃতত্ত্ববিদ এবং একটিভিস্টরা বলছেন যে ১৯ শতকে ব্রিটিশ বসতি স্থাপনকারীরা যখন এই দ্বীপে আসেন তখন ৫,০০০ এর ও বেশী গ্রেট আন্দামানিজ এখানে বাস করতেন। যাইহোক, ব্রিটিশ আগ্রাসন থেকে তাদের এলাকা রক্ষা করার সময় শত শত মানুষ সংঘর্ষে নিহত হয়, এবং সারভাইভার ইন্টারন্যাশনালের মতে আরো হাজার হাজার মানুষ ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সিফিলিসের মহামারী থেকে ক্রমশ মুছে যায়।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, গ্রেট আন্দামান এবং প্রত্যন্ত জারাওয়া এবং সেন্টিনেলিজ জনগণসহ অন্যান্য উপজাতিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চোরাশিকারিরা তাদের এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে, গত সপ্তাহে জারাওয়া এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে আটজন জেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


২০১৮ সালে, ২৬ বছর বয়স্ক এক আমেরিকান মিশনারি নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে গোপনে ভ্রমণ করার পর যাযাবর শিকারী-সংগ্রহকারী উপজাতিকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে। তাঁকে তীরের সাহায্যে মেরে ফেলে উপজাতিরা এবং মৃতদেহ সাথে করে নিয়ে যায় যে মৃতদেহ কখনো উদ্ধার করা যায়নি।
সেন্টিনেলিদের জীবনযাত্রা রক্ষা করতে এবং সংক্রামক রোগের সামনে তাদের উন্মোচন এড়াতে বহিরাগতদের দ্বীপে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন উপজাতি হিসেবে, সেন্টিনেলিরা বহিরাগতদের রোগে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়, যেমন এখন এই করোনাভাইরাস।
বেঁচে থাকা একজন সিনিয়র গবেষক সোফি গ্রিগ বলেন, “এই ভাইরাস যাতে আরো গ্রেট আন্দামানে না পৌঁছায় এবং অন্যান্য উপজাতিদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে আন্দামান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। উত্তর সেন্টিনেলের চারপাশের জলে যথাযথভাবে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থাকরতে হবে এবং তাদের সম্মতি ছাড়া কোন বহিরাগতকে আন্দামান উপজাতির কোন এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়।”
প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের পিছনে বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যেখানে ৩০ লক্ষেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত ভারতে প্রায় ৬০,৮৪০ মানুষ এই সংক্রমণে মারা গেছে।