দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ২০২০ যদি করোনা আতঙ্কে বাঙালীর ঘুম নষ্ট করে তাহলে ২০২১ বঙ্গের মসনদে কে বসবে সেই চিন্তায় বাঙালীর ঘুম নষ্ট হতে চলেছে। বিশেষ করে সেই সব বাঙালিদের যারা ডানপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাসী এক কথায় যাদের শয়ন-স্বপনে-জীবন যাপনে মিশে এক রাহুল-সোনিয়া-মনমোহনে। তবে ৪৩ বছর ধরে জোটের রাজনীতি করে বিধানসভা ভোট কাটা ছাড়া কংগ্রেস তেমন কোনো হুল ফোটাতে পারেনি, বরং তাদের নামে-গন্ধে দ্বিধা-দন্ধে বাংলার ঘরে ঘরে প্রথমে কাস্তে-হাতুড়ি পরে ফুটেছে ঘাসফুল। এহেন ময়দানে যেখানে পদে পদে কাঁকর আর কাঁটা সেখানে আদরের ছোড়দা দ্বায়িত্ব সামলালেও তাঁর অকাল প্রয়াণ এই দলের অবস্থান ও অস্ত্বিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলো। তবে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটালেন সোনিয়া গান্ধীই। তিনি জানেন যে যোদ্ধা লোকসভায় ৩৬ ইঞ্চির চোখে চোখ রেখে কথা কইতে পারে, তাঁর সামনে দিলীপবাবুরা তো বাঘের পিছে ফেউ। সেজন্যে কিঞ্চিত সাহস করেই লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীকে ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিয়োগ করলেন সোনিয়া গান্ধী।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালে রাহুল গান্ধী আকস্মিক ভাবেই তাঁকে সরিয়ে সোমেন মিত্রকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু সোমেন মিত্র’র প্রয়াণের প্রায় এক মাস পরসেই কালের চক্র ঘুরে ফের সেই অধীর চৌধুরীকেই বিধান ভবনের আসনে আসীন করলেন কংগ্রেস কার্যকালীন সভানেত্রী।
কংগ্রেসের বড় দুর্দিন চলছে। পরিবার তন্ত্রে অভিজ্ঞতা আর সাহসের অভাব দেখ দিয়েছে। রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যতই সামনের সারিতে বসুন, সেই প্রাজ্ঞ ও বাগ্মিতা তাদের নেই। যার ফলে গত লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে শোচনীয় ফলাফল। এই মূহুর্তেও কংগ্রেস দলীয় কোন্দল আর নাটক নিয়েই ব্যস্ত। পথে-ঘাটে নেমে বিদ্রোহের বদলে টুইটারে যুদ্ধ আর লোকসভা গৃহে ট্রোল এই এখন কংগ্রেসের পরিচয়। এমনকি লোকসভাতে প্রধান বিরোধী দলের তকমাটাও আর নেই তাদের।
পশ্চিমবঙ্গেও শতাব্দী প্রাচীন এই দলের পরিচয় এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপিত জাতীয় কংগ্রেসের জীর্ণ পতাকা সহ সবুজ রঙের স্টিল পাইপ আর নিচে ছোট গম্বুজের গায়ে ইন্দিরা আর রাজীব গান্ধীর প্লাস্টার করা ছবি। সেই ৮২ সালের পর থেকে আর কারো ছবি কে আইডল করতে অপারগ কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা ভোট আর সেইসাথে করোনার কারণে থমকে থাকা একাধিক পুরসভার নির্বাচনকেই প্কাহির চোখ করতে চাইছেন সোনিয়া গান্ধী। বিধান চন্দ্র রায় বা সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের যোগ্য উত্তরসূরী কিনা এই বিতর্কে না গিয়েই শেষ পর্যন্ত বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ এআইসিসি স্পষ্ট করেন তাদের প্রার্থীর নাম। দলের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি হিসেবে অধীরের নাম ঘোষণা করা হয়।
কংগ্রেস যদি দলীয় তকমা হয় তাহলে কাজের লোক হলেন অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের এই সাংসদ মুর্শিদাবাদ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেবতা তুল্য। যার প্রমাণ মেলে লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে কংগ্রেসের ভরাডুবি বাজারেও নিজের গড় ধরে রাখার সফলতার পরিসংখ্যানে। জাতীয় রাজনীতির ময়দানে তাঁর প্রভাব বাড়ছে, অনেকটা প্রণব মুখার্জী যেমন কংগ্রেসের সবেধন নীলমনি হয়ে ছিলেন, ঠিক তেমনি। কংগ্রেসের বাঙালি শোষণ পূরনো নয়। সদ্য প্রয়াত মাননীয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির জীবনেও বহু সুযোগ এসেছিল, কিন্তু শুধুমাত্র বাঙালি হওয়াতে অনেক শক্তিশালী পদ পান নি প্রণব বাবু। অধীরের ক্ষেত্রেও এমন ব্যাতিক্রম যে হবে না তা সন্দেহাতীত। খুব সূক্ষ্মভাবে ভাবলেই বুঝতে পারবেন কিভাবে কংগ্রেস অধীর চৌধুরির উত্থান কে দাবিয়ে দিলো, লোকসভার দলনেতা পদে থাকা লড়াকু গলাকে বাংলার মসনদে এনে ফেলে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এই বাঙালি রাজনীতিক উপরেই ভরসা রাখে গান্ধী পরিবার। এখন এটাই দেখার অধীরের কোন ম্যাজিকে ধীর লয় থেকে দ্রুত লয়ে ফেরে বাংলার লুপ্তপ্রায় কংগ্রেসের বহমান শীর্ণ ধারা।