দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ‘দশরথ মাঝির’ পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির গল্প সিনেমায় দেখেছেন। কিন্তু সেই দশরথ মাঝির দেশে অর্থাত্ বিহারেই আর এক লড়াকু মানুষের খোঁজ মিললো যিনি বৃষ্টির জল নিজের গ্রামের জমিতে নিয়ে আসার জন্য একা হাতে তিন কিলোমিটার লম্বা খাল কেটেছেন। এই কাজ করতে সময় লেগেছে ৩০ বছর! আর তাঁর সেই পরিশ্রমের সুফল মিলেছে সেই খালবেয়ে জল এসে তাঁর গ্রাম আজ সুজলা-সুফলা।
এই মহামানবের নাম লাউঙ্গি ভুইয়াঁ (৭০)। গয়ার লাহঠুয়া এলাকার কোঠিলাওয়া গ্রামে তার বাস। জলের খোঁজে সমাধান খুঁজতে দেরি হয় নি তাঁর, কিন্তু এ কাজে কেউ এগিয়ে আসতে না চাইলে তিনি একা হাতেই তিন কিলোমিটার লম্বা খাল কেটেছেন । তাঁর সহাস্য ও তৃপ্তি জড়ানো মুখে উক্তি- ‘ এই খাল কাটতে আমার ৩০ বছর সময় লেগেছে। এর ফলে গ্রামের পুকুর জলে ভরেছে’
কিন্তু কিভাবে শুরু হল এই কর্মযজ্ঞ? তিনি জানলেন ‘গত ৩০ বছর ধরে, আমি গবাদি পশু চড়াই। তাদের নিয়ে যাই কাছের জঙ্গলে। জীবনযাপনের জন্য গ্রামবাসীরা শহরমুখী হয়েছেন। নিষ্ফলা জমি গুলি জলের জন্যে কাতর। তখনই ঠিক করি খাল কাটতে হবে। যখনই পশু চড়াতে গিয়েছি, তখনই খাল কেতেছি। এই কাজে কেউ আমার সঙ্গে হাত লাগায়নি। গ্রাম ছেড়ে সবাই চলে গেলেও আমি এখানেই থাকব বলে ঠিক করি।’
উল্লেখ্য গয়া’র প্রশাসনিক দফতর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এই কোঠিলাওয়া গ্রাম। একসময় এটি পরিচিত ছিল মাওবাদীদের আস্তানা হিসেবে। মানুষের মূল উপার্জন চাষবাস ও পশুপালন হলেও বর্ষার সময় বৃষ্টির জল গ্রামে না এসে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সোজা গিয়ে নদীতে মিশতো। গ্রামের জমিতে জলের অভাবে চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই লাউঙ্গি ঠিক করেন, তিনি খাল কেটেই সেই বৃষ্টির জল তাঁর গ্রামে নিয়ে আসবেন, সবাই যাতে সেই জল চাষের কাজে লাগাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করবেন। এরপর থেকে সেই ‘দশরথ মাঝি’র মতই তিনিও অদম্য সংকল্পে খাল কাটতে শুরু করেন।
লাউঙ্গি প্রসঙ্গে পট্টি মাঝি নামক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘একা হাতে গত ৩০ বছর ধরে ওই খাল কেটেছে সে। এতে গ্রামের পশুদের খুব সুবিধে হবে। গ্রামে সেচেও সুবিধে হবে।’ রাম বিলাস সিং ভুইয়াঁর প্রশংসা করে গয়ার এক শিক্ষক বলেছেন, ‘লাউঙ্গির এই প্রয়াসে প্রচুর মানুষ সুফল পাবে। তাঁর এই বিরাট কাজের সাফল্যের জন্য মানুষ এখন তাঁকে চিনতেও শুরু করেছে।’