দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সর্বভারতীয় একটি নিউজ চ্যানেলের দাবি, বৈশ্বিক করোনা যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা যখন ব্যস্ত সে সময়ে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ভারতের বিভিন্ন অংশে জঙ্গি হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত।
এই প্রসঙ্গে ওই নিউজ চ্যানেলটির দাবি,পাকিস্তানের দয়ায় লালিত পালিত বিশ্বের কুখ্যাত জঙ্গি মাসুদ আজহারের নিশানায় অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রামমন্দির। আর সেই অযোধ্যা আক্রমণের জন্যে জঙ্গি নিয়োগের কাজও চলেছে একদমে। নিউজ চ্যানেলের সূত্রানুযায়ী, মাসুদ আজহারের অযোধ্যার রামমন্দিরে হামলার ছক সংক্রান্ত এক্সক্লুসিভ তথ্যও চ্যানেলের হাতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, জম্মু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, সিএএ আইনের প্রবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকার বাস্তবায়িত করার পর থেকেই মৌলনা মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সইদ পাকিস্তানে জঙ্গি নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পর মাসুদ ভারতের ওপর তার প্রতিহিংসার দৃষ্টি দিয়েই রেখেছে আর এই ধরণের হামলার পরিকল্পনা সেই প্রতিহিংসারই বাস্তব রূপদানের মাধ্যম।
প্রসঙ্গত, করোনার জেরে গোটা বিশ্বে লকডাউন চললেও সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তানে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিছুদিন আগে পাকিস্তান কে ফ্রান্সের একটি সংস্থা জংগীদেশ বলে অভিহিত করাতে পাকিস্তান জানিয়েছিল তারা মাসুদ আজহারকে গ্রেপ্তার করেছে কিন্তু আসলে সেসব পাকিস্তানের ছল। সেখানে মোস্ট ওয়ানন্টেড হাফিজ সইদরা বিনা বাধায় সর্বত্র যাতায়াত করতে পারছে।
করোনা’র কারণে মানুষের ভীড় ও চলাচল কম হওয়ার কারণে, জঙ্গি সংগঠন ঢেলে সাজাতে এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে এই দুই জঙ্গিনেতা। ওই বৈদ্যুতিন সংবাদ চ্যানেলের দাবি, অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রাম মন্দির ছাড়াও দিল্লি-মুম্বইয়ে ফের বড় নাশকতা’র উদ্দেশ্যেই এই জঙ্গি প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মাসুদ।
কাশ্মীরের পুলওয়ামা ও পাঠানকোট হামলার মাস্টারমাইন্ড মাসুদ আজহারকে গত বছর আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা কাউন্সিল। কিন্তু, ইমরান খান এখনও মাসুদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
পাকিস্তানি সূত্র মারফত্ খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে একাধিক ভারত-বিরোধী ভিডিয়ো রিলিজ করার পাশাপাশি বিবৃতিও দিয়েছে এই সন্ত্রাসবাদীরা। এমনকি লকডাউনের সময় পাকিস্তানের বড় শহরগুলিতে গিয়ে তারা সভাকরেছে, জমায়েত করে ভারত বিরোধী প্রচার চালিয়েছে।
উল্লেখ্য ভারতীয় নিউজ চ্যানেলটির দাবি, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিষয়টি অস্বীকার করতেই পারেন। কিন্তু, পাক সেনা বাহিনী এই জঙ্গি তত্পরতার বিন্দুবিসর্গ জানে না, এটা মানা যায় না। মূলত: পাক সেনবাহিনীর প্রচ্ছন্ন মদতেই জঙ্গিরা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের স্বর্গদ্যান বানিয়ে ফেলেছে।
একটি বৈদেশিক সমীক্ষার পড়তিবেদন অনুযায়ী এই মুহূর্তে ৪০ হাজার সন্ত্রাসবাদী পাকিস্তানের মাটিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণায় এদের মধ্যে ১৬ জন আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমাও পেয়েছে। এই জঙ্গিরা মূলত: জামাত-উদ-দওয়া, জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য। এই দু’টি জঙ্গি সংগঠনই গোটা বিশ্বে নিষিদ্ধম হলেও পাকিস্তানে এরা তত্পর। আন্তর্জাতিক চাপে থাকলেও বরাবরের মতই এই দুই জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়নি পাকিস্তান।


ওই নিউজ চ্যানেলটির দাবি, ৫ অগস্টের পর থেকেই রাম মন্দিরকে ক্রমাগত নিশানা করে চলেছে পাকিস্তান কারণ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে অনেকেই ভারতে নতুন সময়ের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু, পাকিস্তান অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ভালো চোখে নেয়নি। এমনকি মাসুদ আজহার প্রকাশ্যেই রাম মন্দির নির্মাণকে বেআইনি হিসেবে উল্লেখও করেছে। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের নির্মাণ ঠেকাতে তার অনুরাগীরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত রয়েছে একথাও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন মাসুদ।
উল্লেখ্য, এই বছরের ২৪’শে মে জইশ এর দু’টি ব্যানার প্রকাশ্যে আসে। এর মধ্যে একটিতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আইসি-৮১৪ বিমানের ছবি রয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে জঙ্গিরা এই বিমানটি হাইজ্যাক করেছিল। হাইজ্যাক করা ওই বিমানের যাত্রীদের প্রাণের বিনিময়ে সেসময় ভারত সরকার মাসুদ আজহার-সহ তিন জঙ্গিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। গোটা বিশ্বকে তাদের সেই ক্ষমতার তথা ভারত সরকারের আত্মসমর্পণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই এই ছবিটি প্রকাশ করেছে বলেই মনে করছেন জঙ্গি বিশেষজ্ঞরা।
১৯৯৯ পরবর্তীতে ভারতকে এই প্রত্যর্পণের কারণে চরম মাশুল দিতে হচ্ছে। ভারতের জেল থেকে বেরিয়ে একাধিক হামলার মূলচক্রী ছিল মাসুদ। যার মধ্যে মুম্বাই এ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, স্টেশন এবং তাজ হোটেলে জঙ্গি হামলা সহ আরও ডজন ক্ষাণেক ছোট বড় জঙ্গি হামলা রয়েছে।