দ্য ক্যালকাটা মিরর: ভারতের ‘এনকাউন্টার স্টেট’ হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের অপরাধীদের রাতের ঘুম ওড়াতে হাজির এক নতুন পুলিশ বাহিনী। উল্লেখ্য, যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মোট ৫, ১৭৮ টি এনকাউন্টার হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে ক্ষমতায় আসার পর থেকে যোগীর রাজে উত্তরপ্রদেশে মোট ৬২০০টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে মৃত্যু হয়েছে মোট ১২৪ জনের! যা এখনো অবধি রেকর্ড।
তবে বিরোধীদের মতে পুলিশের এই বাড়াবাড়ি লাইসেন্সড গুণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়, রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদিত্যনাথ কারণ ছাড়াই বিরোধীদের হেনস্থা করেছেন, বহু মানুষকে খুন করেছেন। তবে সেসব অভিযোগ নস্যাত করে এবার পুলিশের জন্যে আরও ‘দরাজহস্ত’ হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্য পুলিশের জন্যে আর মাস তিনেকের মধ্যেই নিয়োগ করা হবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস বা সংক্ষেপে এসএসএফ। এই বিশেষ পুলিশ বাহিনী’র SWAT এর মতই কোনও ব্যক্তিকে কোনওরকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই শুধুমাত্র সন্দেহের বশে গ্রেফতার করা, যে কোনও জায়গায় অনুমতি ছাড়াই তল্লাশি করার ক্ষমতা থাকবে। আর সূত্রের খবর এই গোটা পরিকল্পনাটাই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মস্তিষ্কপ্রসূত।
এই এসএসএফ বাহিনীর প্রথমে পাঁচ ব্যাটেলিয়নের এক-একটিতে ১৯১৩ জন করে পুলিশ থাকবেন। প্রথম ধাপে প্রায় দশ হাজার জওয়ান নিয়োগ করা হবে। এর জন্যে খরচ পড়বে ১৭৪৭ কোটি টাকা।
জানা গিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি রায়ের সাহায্যেই এই বিশেষ বাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছে। যারা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন শহরের আদালত, সরকারি অফিস, ধর্মীয় স্থান, মেট্রো, এয়ারপোর্ট-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোতায়েন থাকবেন। উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ( স্বরাষ্ট্র) অবনীশ কুমার আওয়াস্থি জানিয়েছেন যে পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর হাতে ‘অন দ্য স্পট’ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।
এই এসএসএফ নিয়োগ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিলও পাশ হয়েছে। বিল পাশ হওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত বিষয়ে কার্যকর করতে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে রাজ্যের ডিজিপিকে।
এই এসএসএফ নিয়োগ প্রসঙ্গে বিরোধীরা বলছেন, এমনিতেই পুলিশকে ব্যবহার করে খামখেয়ালী পুলিশি গুণ্ডামি চালাচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ। এই পরিস্থিতিতে বিপুল ক্ষমতা দিয়ে নতুন বাহিনী তৈরি হলে বিরোধী কণ্ঠকে সমূলে গলা টিপে মারা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অবশ্য আদিত্যনাথের সরকার এই পরিসংখ্যানকে ইতিবাচক করেই দেখছেন। এই তথ্য অনুযায়ী, ৬২০০টি এনকাউন্টারে ১৪ হাজারের বেশি অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২৩০০ অপরাধী ও প্রায় ৯০০ পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। প্রসঙ্গত, বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের পর উত্তরপ্রদেশের এডিজি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, দুষ্কৃতী দমনে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। কাউকে ছাড়া হবে না।
সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রতিটি জেলার দুষ্কৃতীদের জন্যে আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘অপারেশন ক্লিন’ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে খবর। আর এবার এই অপারেশন ক্লিনের প্রথম সারিতেই থাকবে এই অকুতোভয় এসএসএফ।