দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারীর সাথে লড়াই করছে সেই সময়ে ওড়িশার মালকানগিরি জেলায় অজানা জলবাহিত রোগে একে একে মারা যাচ্ছেন স্থানীয় জনজাতির সদস্যরা। মাওবাদী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে গত তিন মাসে মারা গিয়েছেন ১০ জন। সরকারী রিপোর্ট জানাচ্ছে তিন মাস আগেও অজানা রোগে এই জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জন বাসিন্দার।
এই প্রসঙ্গে মালকানগিরির জেলাশাসক মনীষ আগরওয়াল জানিয়েছেন, এই জেলার মাথিলি ব্লকের জনজাতিদের গ্রাম সোদিগুড়ায় এই রোগের প্রকোপ বেশি। ওই এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। রক্তের নমূনা ছাড়াও, ওই অঞ্চলের পানীয় জলের নমুনাও জোগাড় করা হয়েছে। তবে রক্ত পরীক্ষা বা জল পরীক্ষা করে এখনও পর্যন্ত অসুখের সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ক্রমশ এই রোগের বিস্তার চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কপালে বলে জানান সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক।
কী উপসর্গ এই রোগের? এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হল দ্রুত শরীর ফুলে ওঠা। আর এর পরেই খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছা কমতে থাকে। না খেতে খেতে ধীরে ধীরে অপুষ্টির কারণে শরীর ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। আর শরীর রুগ্ন হয়ে ফলে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
মালকানগিরি অঞ্চলের মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার পি কে নন্দ জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে মোট ১৪ জন গ্রামবাসীকে হাসপাতালে ভরতি রেখে তাঁদের মল-মুত্র-রক্ত’র বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, অসুস্থদের মধ্যে কেউ কেউ রক্তাল্পতায় ভুগছেন,কয়েকজন ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছেন, আবার ইউরিয়া মেশানো দেশী চোলাই পান করার ফলে কয়েক জনের পেট ও পা ফুলে অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসেও এই জেলার কেন্দুগুড়া গ্রামের ১৫ জন বাসিন্দা পা ও পেট ফুলে মারা যান। কিন্তু মালকানগিরির বাসিন্দাদের বিষয়টা একদমই অন্য। পুষ্টি বিশারদ বসন্ত কুমার করের মতে, মালকানগিরির জনজাতিদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর হার বেশি।
প্রসঙ্গত, চতুর্থ জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ওই অঞ্চলে অপুষ্টির হার ৫১.৮ শতাংশ, যা সম্পুর্ণ ওড়িশা রাজ্য’র সার্বিক গড়ের চেয়ে অনেক কম। এই অসুস্থতা ও অকালমৃত্যু ঠেকাতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজযুক্ত পরিমিত আহার। কিন্তু দেশ ও রাজ্য জুড়ে চলা লকডাউনের কারণে সেই ঘাটতি এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে জঙ্গল থাকায় ম্যালেরিয়ার নিত্য প্রকোপ লেগেই রয়েছে। আর অপুষ্টি’র কারণে জনজাতিগুলির মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেয়েছে।
যদিও মালকানগিরি অঞ্চলে মৃত্যু মিছিল পুরোনো নয়। এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মালকানগিরিতে দুই ধরনের এনসেফ্যালাইটিসে মারা যায় একশোর বেশি শিশু। সেখানেও দেখা গিয়েছিলো মৃত শিশুদের প্রায় সকলেই অপুষ্টিতে ভুগছিল।
এছাড়া ২০১৪ সালের বার্ষিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ওড়িশার বিভিন্ন জেলায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন শিশু অপুষ্টির অভাবে ভোগে। আর শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৬৫%। যা এই সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যিই যথেষ্ট লজ্জা ও চিন্তার বিষয়। ওড়িশা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে দ্রুত এই রোগের কারণ নির্ণয়ত্তোর আসু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।