দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কোয়ার পার্কে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি এই নদীকে আমরা পরিচ্ছন্ন করে তুলতে পারি, তা হলে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের বিরাট উপকার হবে। তাই, গঙ্গাকে পরিষ্কার করার কাজটি এক ধরণের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিও বটে”।
ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো নদী গঙ্গা। বাংলা তথা গোটা দেশের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় এই নদী। এই গঙ্গানদী যে কেবল সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় তাৎপর্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, বরং দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। গঙ্গা জলকে এখনও পবিত্র বলে মনে করেন অনেক মানুষ।কিন্তু সেই গঙ্গা জলেই বাড়ছে দূষণের মাত্রা।
এই গঙ্গার ওপরে স্নান, বর্জ্য পদার্থ ফেলা,কাপড় কাচা প্রায় সবটাই হয়ে থাকে। এর ফলস্বরূপ একটু একটু করে প্রত্যেক দিন আমাদের পরিচয়বাহী গঙ্গা’র নাব্যতা ও জলের মান নষ্ট হচ্ছে। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। গঙ্গার জল বিনষ্ট হওয়ার কারনে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ সহ একাধিক প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আখেরে কোনো সমাধা হয়নি।
২০১৪ সালে উক্ত,প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিতে কেন্দ্রীয় সরকার আবারও ‘নমামী গঙ্গে’ নামক এক সুসংহত গঙ্গা সংরক্ষণ অভিযান চালু করছে। মূলত গঙ্গানদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং নদীর পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যেই চালু হয় এই অভিযান। জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের ফলে গঙ্গার অবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে।
এই প্রকল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুরও করা হয়েছে। আর এই সাফল্যর পাশাপাশি দেশের আরও ৫টি নদীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।এই প্রকল্পের নাম ‘জল শক্তি’। গঙ্গা ছাড়াও পেরিয়ার, কাবেরী, গোদাবরী, নর্মদা ও মহানদীর ক্ষেত্রেও এরকম প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই ৫টি নদীগুলি মূলত দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী।এই নদীর জল কৃষিকাজ সহ মানুষের জীবন জীবিকার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু সম্প্রতি তার অবস্থাও খুবই শোচনীয়।এতোটাই যে, তাতে আর কৃষিকাজ সম্ভব নয়। ঠিক তেমনই ২০১৭ সালের পলিউশন ইন্ডেক্স তথ্য অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বিষাক্ত নদীর নাম হিসেবে উঠে এসেছে ‘পেরিয়ার’ নদীর নাম। সেখানে মানুষ তো দূরের কথা কোনো জীবের শরীরের পক্ষেও এই জল অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
তেমনই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক পদার্থ মিশে রয়েছে এই ‘কাবেরী’ নদীতে। আর নানা ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করা হয় সেখানে যার দরূন বিভিন্ন রাসায়নিক নদীতে মেশার ফলে মানুষের শরীরেও তার প্রভাব দ্রুত দেখা মিলছে।এরকম একই অবস্থা গোদাবরী ও নর্মদার ক্ষেত্রেও। তবে এই উদ্যোগ গুলি নদীকে বাঁচিয়ে তুলতে পারলে উপকৃত হবেন দেশের অসংখ্য মানুষ সহ দেশের অর্থনীতিও।
কিন্তু এখনও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ মে মাসে করা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের ফলে জলের তেমন উন্নতি হয়নি। বরং লকডাউনের ফলে গঙ্গা সহ এই সকল নদীগুলি অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়েছে। কিন্তু তা যৎসামান্যই। কারণ আনলক পর্যায় শুরু হওয়ার দরুন গঙ্গার জলে ফের অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। জল হতে থাকে দূষিত।
এই সকল উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারি তরফ থেকে টাকাও দেওয়া হবে।এছাড়া পুরসভা সহ দেশের সাধারন মানুষ যাতে নদী গুলিতে নোংরা ফেলতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। তবে বলা বাহুল্য যে, শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগে আদৌ কতটা সাফলতা পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ একটা থেকেই যাচ্ছে।