দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: রামের বনবাসে যেভাবে রাম লঙ্কা গিয়ে রাবণ বোধ করেছিল, ঠিক নেদারল্যান্ডের থেকে আসা ‘ভোদাফোনের’ দীর্ঘ ১৪ বছর পর ভারত বধ। হ্যাঁ, শুনতে একটু অবাক লাগলেও সত্যি। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা বকেয়া ‘কর’ সংক্রান্ত মামলায় শেষ পর্যন্ত জয় হল ভোডাফোনেরই।
উল্লেখ্য,বহুজাতিক এই ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থার থেকে বকেয়া কর এবং সুদ বাবদ প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা দাবি করেছিল ভারত সরকারের আয়কর দফতর। গত কাল অর্থাত্ শুক্রবার, দীর্ঘ শুনানি চলার পর ভারত সরকারের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। হেগ-এর এই আন্তর্জাতিক আদালত ভারত সরকারের এই বকেয়া কর দাবিকে অন্যায্য ও নিয়ম বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে।
প্রসঙ্গত, ভারত সরকার এবং নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে যে বৈদেশিক লগ্নি সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে এই মামলাতে টা স্পষ্ট যে ভোডাফোনের উপরে কর চাপিয়ে ভারত সরকার চুক্তি উলঙ্ঘন করেছে। এদিনের রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত সিদ্ধান্তে আসে যে নয়াদিল্লি থেকে ভোডাফোনকে পাঠানো বকেয়া কর প্রদানের নোটিশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। সেই সাথে আদালত এও সিদ্ধান্তে এসেছে যে পাশাপাশি এই দীর্ঘদিনের আইনি মামলা লড়ার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই বেসরকারি টেলকম সংস্থাকে ভারত সরকারের ৪০ কোটি টাকার বেশি দেওয়া উচিত।
কী হয়েছিল ভারত সরকারের সাথে ভোডাফোনের, আসুন জেনে নেওয়া যাক। ভোডাফোন (Vodaphone) কোম্পানী ২০০৭ সালে হাচিসন (Hutchinson) হামপোয়া সংস্থার কাছ থেকে ভারতে চালানো মোবাইল পরিষেবা অধিগ্রহণ করে। ২০০৭ সালের আগে এই কোম্পানীর পরিষেবা হাচ (Hutch) নামে ভারতে পরিচিত ছিলো। সেই সময়ে ১,১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে এই হস্তান্তরকে ভোদাফোন কোম্পানীর ‘আয়’ বলে ধরে নিয়ে তার উপরে কর ধার্য করে ভারত সরকারের আয়কর বিভাগ। ফলত: এক্ষেত্রে ভোডাফোনের থেকে ২০,০০০ কোটি টাকা দাবি করে সরকার। যার মধ্যে ৭,৯০০ কোটি টাকাই ছিল জরিমানা। আর সরকারের এই দাবি কে অন্যায় বলে এর বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ব্রিটিশ সংস্থাটি।
এর পর এই মামলাতে ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হয় ভোডাফোন। কিন্তু ওই বছর শেষের দিকে কর সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে কেন্দ্র। সেই সংশোধিত আইনে পুরোনো লেনদেনের উপরে কর চাপানোর সংস্থানটি রাখা হয়। ফলে ভারত সরকারের চাপানো কর অপরিবর্তিত থেকে যায়। যার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নিরুপায় হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় ভোডাফোন।
এই বিষয়টি একটু খুলে বুঝতে গেলে জানতে হবে ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং’ নিয়ে। অনেক সময়ই ব্যবসার স্বত্ত্ব, পরিষেবা বা সম্পত্তি এক দেশের শাখা সংস্থা থেকে অন্য দেশের শাখা সংস্থায় হস্তান্তর করে থাকে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। একে বলা হয় ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং’। বহুজাতিক ব্রিটিশ ভোডাফোন যেএভাবেই ‘রাইটস’ হস্তান্তর করেছে, কিন্তু অনেক সময়ই কর বিভাগের ধারণা যে সংস্থাটি কর ফাঁকি দিচ্ছে।
শুধু ভোডাফোন নয়, ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের জেরে কর চেপেছে আরও একাধিক সংস্থার উপরে। যার মধ্যে বেশকিছু মামলা আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এই পুরোনো লেনদেনের জেরে ভোডাফোনের উপরে চাপানো আয়কর (রেট্রোস্পেকটিভ ট্যাক্স) নিয়ে ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছিল। সে সময়ে (২০১২) ভারতে আচমকা ও অপ্রত্যাশিত ভাবে কর নীতির পরিবর্তনের প্রভাব ভারতের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের উপরেও পড়েছিল বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।