দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: অত্যাধুনিক রিজিওনাল র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (আরআরটিএস) ট্রেনের প্রথম ছবি সামনে আনল কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রক। মন্ত্রক সুত্রে খবর এই ট্রেন চললে হ্রাস পাবে বায়ু দূষণ। কমবে দুর্ঘটনা’র সম্ভাবনাও।
এই ট্রেনের প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮০ কিলোমিটার। এমনই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় তৈরি সেই ট্রেন প্রাথমিকভাবে দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও মীরাটের মধ্যে চলাচল করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরবর্তীতে কলকাতা, ব্যাঙ্গালরু ও মুম্বাইয়ের মধ্যেও এমন যোগাযোগ তৈরি করা যায় কিনা সেটাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
আরআরটিএস প্রস্তুতকারী এনসিআর ট্রান্সপোর্টের (এনসিআরটিসি) তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, এই ট্রেনের প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের মধ্যেই। ইতিমধ্যেই দিল্লি-মীরাটের মধ্যে প্রস্তাবিত ৮২ কিলোমিটার ট্র্যাকের জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩০,৭২৪ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে গাজিয়াবাদের সাহিবাবাদ এবং দুহাইয়ের মধ্যে ১৭ কিলোমিটারের অংশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছেছে। এই অগ্রাধিকারের অংশটিতে ২০২৩ সালে ট্রেন্ম চলাচল শুরু হবে এবং ২০২৫ সালে’র মধ্যে পুরো ৮২ কিলোমিটারই অতিক্রম করবে আরআরটিএস। যদিও ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে দৌড়ানোর জন্য নির্মিত হলেও ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারে সেই ট্রেন চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। যাত্রা পথে মোট ২৪ টি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে।
এনসিআরটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনয় কুমার সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, ‘নতুন ভারতের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে ভারতের প্রথম আরআরটিএসের নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটি শক্তি (Energy) সাশ্রয় করবে, ব্রেক কষার সময় ৩০ শতাংশ শক্তি পুনুরুৎপাদিত হবে।’ এর ফলে আরআরটিএসের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত খরচও বহুলাংশে কম হবে।
কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রক জানিয়েছে দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও মীরাট করিডরের সব ট্রেনই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় গুজরাতের বোম্বারডিয়ারের সাবলি প্ল্যান্টে তৈরি করা হবে। এনসিআরটিসি প্রাথমিকভাবে ৩০ টি ট্রেন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে । প্রতিটি ট্রেনে মোট ছ’টি কোচ থাকবে। এছাড়াও তিন কোচ বিশিষ্ট ১০ টি ট্রেনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা লোকাল ট্রানজিট মডিউল হিসেবে মীরাটে ব্যবহার করা হবে।
এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত আধিকারিকদের দাবি, দেশের মধ্যে এই প্রথমবার ভারতে তৈরি অত্যাধুনিক ট্রেন (বুলেট ট্রেনের সদৃশ) দৌড়াবে। এই ট্রেনের বাইরের অংশ স্টিল দিয়ে তৈরি করা হবে এবং দিল্লির লোটাস টেম্পলের (Lotus Temple) এর আদলে ট্রেনের ‘নাক’-(Nose) এর নকশা করা হয়েছে।
এই ট্রেন সম্পুর্ণরূপে বাতানুকূল, হালকা ওজনের আর ট্রেনের দরজাও অন্য ট্রেনের থেকে বড়। প্রতিটি কোচে ছ’টি স্বয়ংস্ক্রিয় প্লাগ-ইন দরজা থাকছে। ট্রেনের উভয় পাশে তিনটি করে দরজা থাকছে। শুধুমাত্র বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে দু’দিকে দু’টি করে মোট চারটি দরজা। আর মজার ব্যাপার হলো সেই ট্রেনের সব দরজা একইসঙ্গে খুলবে না। যে দরজা প্রয়োজন স্টেশন অনুযায়ী সেই দরজা খোলা যাবে। এর ফলে শক্তি সাশ্রয় হবে।
এই প্রসঙ্গে এনসিআরটিসির প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক সুধীর শর্মা জানান, ‘দরজার ভেতরে এবং বাইরে একটি পুশ বাটন থাকবে। যার সাহায্যে যাত্রীরা দরজা খুলতে পারবে। নাহলে সব দরজা একসঙ্গে খুললে বাতানুকূল পরিবেশে শক্তি (Energy) খরচ বেশি হয়।’
কেমন হচ্ছে সেই ট্রেনের ভেতরের সজ্জা। বসর আসনের সামনে পা ছড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গা-সহ ২X২ হিসেবে সীট থাকছে। পরতি আসনেই হাত রাখার জন্যে হাতল থাকবে ও ধরে বসার জন্যে অবলম্বন থাকবে। বিমানের মতো মাথার উপর জিনিসপত্র রাখার বাঙ্কার থাকবে। এছাড়া প্রতি যাত্রীর মোবাইল ও ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার সকেট এরও বন্দোবস্ত থাকবে। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সহজ করার জন্যে থাকছে হাইস্পীড ওয়াই-ফাইও।


কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব দুর্গাশংকের মিশ্র আরআরটিএস এর ভবিষ্যত্ নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী । তিনি উল্লেখ করেন যে, আপাতত সড়কপথে দিল্লি থেকে মীরাট যেতে ঘণ্টা তিন-চারেক সময় লাগে। আর আরআরটিএস চালু হলে তা ৫৫ মিনিটে এসে ঠেকবে। আর যদি সেটা এক্সপ্রেস পরিষেবা হয় তাহলে সময় লাগবে আরও কম লাগবে। প্রায় ৩৫ মিনিট। এরফলে ন্যাশন্যাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন বা NCR যানজট মুক্ত হবে এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এখনো পর্যন্ত প্রস্তাবিত নকশা ও প্রকল্পের ধরণ অনুযায়ী প্রথম দফায় মোট তিনটি করিডরে আরআরটিএস চলবে। দিল্লি-মীরাট ছাড়া দিল্লি-গুরুগ্রাম-এসএনবি এবং দিল্লি-পানিপথে বাকি দুটি করিডরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেইসাথে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নির্মাণ শুরুর আগের যে কাজ রয়েছে , তা ইতিমধ্যেই দিল্লি-গুরুগ্রাম-এসএনবি করিডরে জোরকদমে চলছে। এছাড়া সেই করিডরের অনুমোদনের জন্য বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র। অন্যদিকে, হরিয়ানা ও দিল্লি সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে দিল্লি-পানিপথ করিডরের জন্য।
পশ্চিমবঙ্গের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শিয়ালদহ থেকে এনজিপি পর্যন্ত রুট কে তিনটে ভাগে ভাগ করে নিয়ে বর্তমান রেলে’র উন্নতি করে এই ট্রেন চালানো হলে, উত্তরের সাথে দক্ষিনের যোগাযোগ দ্রুত হবে যা বাংলার ব্যবসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নতির জোয়ার আনতে পারবে।