দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগেও সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন, এবার সেই দাবি আরও দৃপ্ত কন্ঠে উপস্থাপন করলেন রাষ্ট্রসংঘের সামনে। আজ তিনি স্পষ্টতই জানালেন, সংস্কার ছাড়া ১৯৪৫ সালের রাষ্ট্রসংঘের মডেল এই একবিংশ শতকের বিশ্বে কার্যত অচল। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্যপদ প্রদানের আরও একবার দাবি জানালেন।
উল্লেখ্য, শনিবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভাষণে মোদী আবেদন রাখেন, ‘ভারতের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রসংঘের সংস্কারের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ ভারতের মানুষ চিন্তিত যে আদৌও এই সংস্কার প্রক্রিয়া কখনও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে কিনা।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য করার প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা চলছে ইউএন এ, এই বিষয় নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মোদী। মোদী বলেন যে ইউএন এ এই প্রক্রিয়ার আলোচনা সংক্রান্ত কোনও নথিও ভারত কে দেখানো হয়নি। আজ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সামনে কেন ভারত গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়টি ই তুলে ধরেন। আয তাঁর ভাষণের ভঙ্গিমা ছিল দৃপ্ত, তাঁর বক্তব্য ছিল ছুরির মতো ধারালো।
শনিবার যুক্তরাজ্যের সংসদ কে সম্মান জানিয়েই মোদী বলেন, ‘ভারতকে আর কতদিন রাষ্ট্রসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কাঠামোর বাইরে রাখা হবে?’
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যা যা বলছেন আজ সেগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-
১৯৪৫ সালে যখন রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। এখন একবিংশ শতকের প্রজন্মের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা আলাদা রকম। তাহলে রাষ্ট্রসংঘের সেই পুরোনো বৈশিষ্ট্য কি আজও প্রাসঙ্গিক ?
প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্যে জন্য বর্তমান বিশ্বে নিজেকে পরিবর্তন করা জরুরী। এখন সময়ের চাহিদা রাষ্ট্রসংঘের প্রতিক্রিয়ায় সংস্কার, ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং সামগ্রিক সংস্কারও। এটা সত্য যে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের মনে রাষ্ট্রসংঘের প্রতি যে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা আছে, তা এখনো অতুলনীয়।
ভারতকে আর কতদিন রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দেশের বাইরে রাখা হবে? যে দেশ বিশ্বের সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক দেশ, যে দেশে পৃথিবীর ১৮ শতাংশ মানুষ থাকেন, যেদেশে কোটি কোটি ভাষা, সেই দেশ কেন এই সুবিধা পাবে না!
যখন আমরা শক্তিশালী ছিলাম, বিশ্বের কাউকে আমরা জ্বালাতন করিনি। যখন আমরা বাধ্য হয়েছিলাম, তখনও কারোর উপর বোঝা হয়নি ভারত।
প্রধান মন্ত্রী তাঁর ভাষণে এও বলেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ১৫০ টি দেশকে জরুরি ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে ভারত। শুধু তাই নয় বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের সমস্ত মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ভারত প্রস্তুত।
মোদী জি এও বলেন যে আমি বিশ্বের সব দেশগুলিকে আশ্বাস দিতে চাই যে ভারতের টিকা উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষমতা পুরো মানবজাতিকে এই মহামারী থেকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। ভারত ও তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের দিকে এগোচ্ছে। টিকার ডেলিভারির ক্ষেত্রে কোল্ড চেন এবং তা সংগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ভারত সব দেশকে সাহায্যকরতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী এও উল্লেখ করেন যে গত কয়েক বছর ধরে সংস্কার-কাজ করা-পরিবর্তনের (রিফর্ম-পারফর্ম-ট্রান্সফর্ম) মন্ত্রের সঙ্গে কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ভারত।
সর্বশেষে প্রধানমন্ত্রী জানান যে মহামারীর ফলে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, সেই সময় আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে ভারত। ভারতের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক হয়ে দেখা দেবে। কোনো রকমের বৈষম্য ছাড়াই সব প্রকল্প যাতে সব মানুষের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারত কাজ করে চলেছে।