দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যশবন্ত সিং দীর্ঘ রোগভোগের পরে আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। রবিবার যশবন্ত সিংয়ের মৃত্যুতে, প্রয়াত নেতার প্রতি টুইটারে শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
উল্লেখ্য, প্রয়াত এই বর্ষীয়ান নেতা ২০১৪ সালের ৭’ই আগস্ট নিজের বাড়ির শৌচাগারে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। সেই আঘাত থেকে তিনি গভীর কোমায় চলে যান। চিকিৎসকরা দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন, কিন্তু এই অবস্থা থেকে তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলোনা। রবিবার সকালেই তাঁর প্রয়াণ হয়।
রাজস্থানের বারমের জেলার জসোল গ্রামের এক রাজপুত পরিবারে ১৯৩৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন যশবন্ত সিং। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে পদার্পণ করেন রাজনীতিতে। রাজনীতিতে তাঁর পরিচয় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে। দীর্ঘ মেয়াদী সাংসদদের মধ্যেও অন্যতম ছিলেন তিনি। সংসদে তাঁর সক্রিয় সময়কাল ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। যার মধ্যে ছিল অর্থ, বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ১৯৯৮-৯৯ সালে তিনি যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন হাতছাড়া হলে তিনি রাজ্য সভায় বিজেপি’র হয়ে বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করেন।
তবে রাজনৈতিক জীবনের শেষের দিকে বিজেপি’র সাথে তাঁর সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে ঠেকেছিল। এর কারণ ২০০৯ সালে তাঁর লেখা একটি বইয়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নার প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বিজেপির তরফ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাহারের নির্দেশ অমান্য করায়, ধীরে ধীরে একঘরে হয়ে পড়েন। তিনি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙ লোকসভা থেকে জয়ীও হয়েছিলেন।
কিন্তু সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছনোর কারণে ২০১৪ সালের লোক সভা নির্বাচনে তিনি টিকিট পাননি। তা সত্ত্বেও তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে নিজের জেলা বারমের থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ অমান্য করায় শেষ পর্যন্ত ওই বছরের ২৯ মার্চ বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হন দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যশবন্ত সিং। এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরেই নিজের বাড়ির শৌচাগারে পড়ে গিয়ে গভীর কোমায় আচ্ছন্ন হন বর্ষীয়ান নেতা। আজ ভোরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ভারতের এই প্রাক্তন সেনানি।