দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ২০২০ শেষ এ দাঁড়িয়ে একটাই প্রশ্ন, আর কত নির্ভয়া, আর কত দামিনী আর কত নির্যাতিতার লাশ চিত্কার করে বলবে এ আমার স্বাধীন ভারত! গণধর্ষণ যেন ভারতের গণ দর্শনে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালের ২০’শে মার্চ ঐতিহাসিক রায়ে নির্ভয়া কান্ডে দায়ীদের ফাঁসি হওয়ার পর জনমানসে কী ন্যূনতম পরিবর্তণ লক্ষ্য করা গিয়েছে! সম্ভবত নয়, হাথরাসে গণধর্ষণে তরুণীর মৃত্যু বার বার প্রমাণ করে, ভারতের চন্দ্রযান একদিকে যখন আকাশের চাঁদে আছড়ে পড়েছে ঠিক তেমনি সেই অন্ধকার আছড়ে পড়েছে হাথরাসে’র চাঁদমুখ ওই তরুণীর শরীরে।
আজ দেশ জুড়ে প্রতিবাদ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে যখন উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে, তখনই এ ব্যাপারে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন এই নিশ্চুপ দেখে থাকা, কোন রাজনীতি মানুষের মৃত্যুর থেকেও দামী! হ্যাঁ, প্রত্যেক মানুষের সাথে সাথে এবার গর্জে উঠলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস।
এই ন্যাক্কারজনক ও পৈশাচিক ঘটনায় অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সাথে সাথে বিরাট কোহলী, কঙ্গনা রানাওয়াত, অনুষ্কা শর্মা , শিল্পা শেট্টি , প্রীতি জিন্টা , জাভেদ আখতার ,রীতেশ দেশমুখ সহ অন্যান্যরাও গর্জে উঠেছেন সোসাল মিডিয়াতে বা নিজের নিজের পিআর মিডিয়াতে।
অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তাঁর সোশ্যাল নেটওয়র্কিং সাইট ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেই পোস্টে অভিনেত্রী যা লিখেছেন তার বাংলা তর্জমা করলে এই দাঁড়ায় যে, ‘এই অসম্মান এবং অত্যাচার, ফ্রাস্ট্রেশন, রাগ, কষ্ট, অসহায়তা… সব ইমোশন যেন লুপ-এ প্লে করছে। এত ঘৃণা কেন? পুত্র সন্তানের মা-বাবারা কি শুনতে পারছেন? আইন কি বধির হয়ে গিয়েছে? কানে পৌঁছাচ্ছে না কান্নার শব্দ? আর কতজন নির্ভয়া হবেন? আর কত বছর এমনটা চলবে?’


এই ভয়ংকর ঘটনা নিয়ে শিল্পা শেট্টি তাঁর পোস্টে বলেছেন, “একটা নতুন জীবন এমন নারকীয়ভাবে শেষ করে দেওয়া হল। আমি স্তম্ভিত। আমি প্রার্থনা করি, যে মেয়েটির জীবন এভাবে শেষ হয়ে গেল… সে যেন ন্যায় বিচার পায়। অনুমানও করতে পারছি না ওর পরিবার কী অসম্ভব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অন্ধকারের মধ্যেও আশা করছি অপরাধীরা এই ঘৃণ্য অপরাধে কঠোর শাস্তি পাবে। দেশের জেলের জায়গা আর আইনের সময় অযথা নষ্ট করা হবে না। ওর পরিবারের জন্যে রইল আমার প্রার্থনা। ঈশ্বর ওঁদের শক্তি দিন।”
এই প্রসঙ্গে অনুষ্কা লেখেন, “হাথরাস গণ ধর্ষণের ঘটনা শুনে আমি বিধ্বস্ত। আমি একান্তভাবে চাই এই নারকীয় ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের যেন কঠোরতম সাজা হয়। একটা ফুটফুটে জীবনকে এভাবে শেষ করে দিল… মেয়েটির পরিবারের জন্যে পড়ে থাকল এমন এক যন্ত্রণা যা কোনওদিন ঠিক হবে না।”


কঙ্গনা তাঁর টুইটার পোস্টে লেখেন, “আমার যোগী আদিত্যনাথজির উপর অগাধ ভরসা আছে। ঠিক যেভাবে প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির ধর্ষকদের ধর্ষণের জায়গায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হয়েছিল, সেই একই ভাবে ইমোশনাল, ইনস্টিংটিভ এবং ইমপালসিভ ন্যায় বিচার চাই হাথরাস ঘটনারও।”
উল্লেখ্য, ২ সপ্তাহ আগে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের পর সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই তরুণী। তবে ২ সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে তীব্র পাঞ্জা কষে অবশেষে হার মানেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে দিল্লির হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে নিজের গ্রামেই গণধর্ষিতা হয়েছিলেন ২০ বছরের তরুণী। পাশাপাশি তাঁর উপর চলেছিল নৃশংস অত্যাচার। শরীরে বেশ কয়েকটি হাড় ভাঙা অবস্থায় এব জিভ কাটা অবস্থায় তাঁকে সে রাজ্যেরই একটি হাসপাতালের আইসিউ-তে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হওয়ায় সোমবার রাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিল্লির হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এমনকি হাথরাসে গণধর্ষণে মৃত তরুণীর দেহ জোর করে রাতারাতি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মৃত তরুণীর পরিবারকে বাড়িতে তালাবন্ধ করে মঙ্গলবার রাত ২.৩০টে নাগাদ দেহটি সত্কার করে দেয় পুলিশ। নৃশংস গণধর্ষণের পরও অভিযোগ দায়েরের সময় কোনওরকম সহযোগিতা না-করার অভিযোগ উঠেছিল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ কে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই এই উঁচু-নিচুর যাতা কলে কেন প্রাণ দিতে হবে এই নির্ভয়াকে!