দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হাথরস মামলায় মৃতার পক্ষ হয়ে স্বত:প্রণোদিত ভাবে পক্ষ নেওয়া আইনজীবী সীমা কুশওয়াহাকেও আটকালো উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। উলেখ্য, হাথরাস মামলা কান্ডে দোষীকে শাস্তি দিতে এবার এগিয়ে এলেন নির্ভয়া কান্ডের সফল আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা। এই মামলার ভার এবার নিজের কাঁধেই তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আইনজীবী। সূত্রের খবর, নির্ভয়ার পর সীমা কুশওয়া হাথরসের দলিত তরুণী মনীষা বাল্মীকিকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছেন। এর ফলে সারা দেশ জুড়ে গত দুদিন ধরে যাঁরা হাথরস কান্ডের নৃশংসতার যোগ্য বিচারের দাবি করছেন, কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছেন তাঁরা।
অন্যদিকে পুলিশি ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে উওর প্রদেশের গোটা হাথরস। এমনকি কারোকেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাঁধা পেয়েছেন একাধিক বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। আবারও ঘটল সেই একই ঘটনা। এ বার ওই একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন বিশিষ্ট আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার প্রায় আট বছর পর অভিযুক্তদের ফাঁসি হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। আদালতের এই রায়ের প্রধান কান্ডারি ছিলেন সীমা কুশওয়াহ।
বিনা পারিশ্রমিকে নির্ভয়া কান্ডে নির্যাতিতার আইনি লড়াইয়ে তিনি যেমন পাশে থেকেছেন,ঠিক তেমনই হাথরস কাণ্ডেও নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে আইনি লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু যোগী রাজ্যের পুলিশ তাঁকে কোনোভাবেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাথরসে রাহুল গাঁধী এবং কংগ্রেস নেতারা নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় তাদেরকে আটকে দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে পুলিশের। কোনোভাবেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে না দিয়ে রাহুল সহ কংগ্রেসে নেতাদের
গাড়িতে তুলে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহল তোলপাড়।


এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে অনেক সওয়ালের সম্মুখীন হতে হচ্ছে গোটা উওরপ্রদেশের সরকারকে। কিন্তু যোগীর সরকার কোনো প্রশ্নের উওর না দিয়ে তারা একেবারে চুপ। ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে যোগী রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধেও। রাহুলগান্ধী -র পর নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সীমা যখন দেখা করতে যান সেইসময় পুলিশ তাঁর রাস্তা আটকায় বলে অভিযোগ। পরে থানায় গিয়ে অনুরোধ করলেও, নির্যাতিতার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পাননি তিনি।
সূত্রে জানা গিয়েছে, হাথরসে পুলিশের যে দল সীমা কুশওয়াহাকে নির্যাতিতার বাড়িতে যেতে বাধা দেয়, তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসকও শামিল ছিলেন। একটি সংবাদমাধ্যমে আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত হাথরস ছেড়ে যাব না আমি। ওঁরা আমাকে আইনজীবী হিসেবে চেয়েছেন। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন আমাকে ওঁদের সঙ্গে দেখাই করতে দিচ্ছে না। নির্যাতিতার দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। যে মেয়ে কথা বলতে পারছিল না, কিছু লেখার ক্ষমতা ছিল না, সবার আগে তার ডাক্তারি পরীক্ষা হওয়া উচিত ছিল।’’
উত্তর প্রদেশের হাথরাস গ্রামের উনিশ বছর বয়সী দলিত তরুণীর গণধর্ষণ এবং ১৫ দিন পর মৃত্যুর ঘটনায় এখন উত্তাল সারা দেশ। অভিযুক্ত ৪ ধর্ষকের চরমতম ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তার মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে যে ভাবে রাতারাতি নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী সীমা। তিনি আরোও বলেন, ‘‘অন্যায় ভাবে মেয়েটির দেহ সৎকার করে দেওয়া হয়। পরিবারের অনুমতি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। যে পেশাতেই থাকুন না কেন, এ দেশে কোনও মহিলা বুক ঠুকে বলতে পারবেন না যে, তাঁরা নিরাপদ। আইন-কানুন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’’
হাথরসের ঘটনার ভয়াবহতা নির্ভয়া কাণ্ডের সেই স্মৃতিই নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে চার ভক্ষকের হাতে সম্মান যায় উত্তর প্রদেশের মনিষার। দলিত হওয়ার দরুণ সমাজের উচ্চবৃত্তদের কাছে আবারও হার মেনে যায় এক নারীর সম্মান। দীর্ঘ ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর গত মঙ্গলবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় ১৯ বছরের ওই তরুণীর।মৃত্যুযুদ্ধে হার মানা মেয়েটির সঙ্গে দেখা এমনকি স্পর্শ টুকুও করতে দেয়নি যোগী রাজ্যের পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার ওপর প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে তিন সদস্যের এক বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে রাজ্য সরকার। এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। যদিও ময়নাতদন্তে ধর্ষণ প্রমাণিত হয়নি বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন রাজ্যের অতিরিক্ত ডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রশান্তকুমার। কিন্তু গোটা ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শুরু থেকেই।