দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ে যুক্ত দেশের বড় মাপের কর্পোরেট সংস্থাগুলির কর্মীদের নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছেন সরকার। Covid-19 ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য কর্পোরেট স্তরের মানুষের জন্যে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে মোদী সরকার। শুধু তাই নয় এই বিষয়ে টিকা উৎপাদন সংস্থাগুলির সঙ্গে পাকাপাকি চুক্তি করা নিয়েও পরিকল্পনা চলেছে।
এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারতের টিকা পরিকল্পনা খাতে খরচের বেশিরভাগই বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং তা প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা। তবে ২০২১ সালে ভারতের সব নাগরিককে কোভিড টিকা দেওয়া সম্ভব নয় বিশেষ করে বিপুল পরিমাণ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহমত হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসনও।
তবে ওই আধিকারিকের মতে বড় সংস্থার কর্মীদের টিকাকরণের পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। একবার সেই অনুমোদন পাওয়া গেলে ইন্ডিয়া ইনকর্পোরেটিভ-এর এই বিশেষ শাখা দেশের অতিমারী দমন প্রকল্পের অন্তর্গত হবে। যেপ্রকল্পে ইতিমধ্যে শামিল স্বাস্থ্যকর্মী, কোমর্বিডিটি যুক্ত রোগী এবং বর্ষীয়ান নাগরিকরা। এবার করপোরেট সংস্থার কর্মীরাও এর অন্তর্গত হবেন।
আসলে করপোরেট সংস্থা মানেই মুনাফা আর মুনাফা মানেই সরকারী কোষাগারে মোটা ট্যাক্স। ইতিমধ্যে অতিমারীর জেরে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলির একটি বড় অংশে উৎপাদনের হার প্রায় ২৪% হ্রাস পাওয়ায় মোদী সরকারের অর্থনীতি উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও গত ১ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার আগে মোট চারটি আনলক প্রক্রিয়া ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তবে সেই ফেজগুলোতে শিল্প চালু হলেও চাহিদা কম থাকায় উৎপাদনের ভাটা কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
ওই কারণে কোন কোন করপোরেট সংস্থাকে সরাসরি উৎপাদকের থেকে ভ্যাকসিন কিনতে দেওয়া হবে, তা স্থির করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে প্রশাসনিক সূত্রের গোপন খবর, পেট্রোলিয়াম, ইস্পাত, ফার্মাকোলজি, সিমেন্ট ও কয়লা ক্ষেত্রগুলিকেই এই ব্যাপারে বেছে নেওয়া হতে পারে। আইটি সেক্টর ও অন্তর্গত হতে পারে সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য এই করপোরেট পলিসি নির্ধারিত হলে এই সংস্থা গুলিকে সরকারের ওপর নির্ভর করে না থেকে সরাসরি উৎপাদকের কাছে থেকে নিজেদের কর্মীদের জন্যে ভ্যাকসিন কেনাতে ছাড়পত্র মিলবে। এর জন্যে সংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে টাকাও দেবে, এতে কেন্দ্রের উপর থেকে খরচের পরিমাণও খানিক হালকা হবে। তবে জানা গিয়েছে, এই সমস্ত সংস্থার ভ্যাকসিন ব্যবহারের সব তথ্যই প্রশাসন নজরে রাখবে ও সংরক্ষণ করবে।
এখনো যা পরিস্থিতি তাতে আগামী বছরের শুরুতে ভারতে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ডোজ প্রদান চালু হতে পারে। তাই সেকারণে প্রথমেই পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা মজবুত করাতেই মন দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আর এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও সম্ভাব্য টিকা উৎপাদক সংস্থা এবং অন্য সব পক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
আসলে এই নতুন টিকা বিতরণ নিয়ে বিশেষ নজর ও পরিকাঠামোগত দিকে নজর রাখতে হচ্ছে কারণ বেশ কিছু ভ্যাকসিন বরফে জমিয়ে কোল্ড চেনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে আর বাকিগুলি রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে বা পরিবহন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতে তৈরি ভ্যাকসিনগুলির মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার তৈরি ভ্যাকসিন, যা এ দেশে উৎপাদনে সহযোগিতা করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII)।
এসআইআই ছাড়াও, ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলা গত আগস্ট মাসে তাদের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করেছে। অন্যদিকে হায়দ্রাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেকও এই সেপ্টেম্বর থেকে তাদের ভ্যাকসিন-‘কোভ্যাকসিনের’ দ্বিতীয় পর্যায় ট্রায়াল শুরু করেছে।
এই বিষয়ে নীতি আয়োগ সদস্য ডক্টর ভি কে পাল এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণের নেতৃত্বে কোভিড ভ্যাকসিন পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ দল। এছাড়া ভারতের পাশাপাশি নজর রাখা হয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ইজরায়েল ও জার্মানির কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতি ও বাজারজাত করার পরিকল্পনার ওপরে।