দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হাথরাস কান্ডে সোচ্চার গোটা দেশ। টানা তিন দিনের লড়াইয়ের পর অবশেষে হাথরাসে প্রবেশর অনুমতি মিললো সংবাদমাধ্যমের। উত্তর প্রদেশের হাথরাস গণধর্ষণ কান্ডে মিডিয়ার কাছে নতি স্বীকার করল যোগীর পুলিশ প্রশাসন। অন্যদিকে ইনসাফের আশায় দিনগুনছে নির্যাতিতার পরিবার।
উত্তর প্রদেশের হাথরাস গ্রামের উনিশ বছর বয়সী দলিত তরুণীর গণধর্ষণ এবং ১৫ দিন পর মৃত্যুর ঘটনায় এখন উত্তাল সারা দেশ। অভিযুক্ত ৪ ধর্ষকের চরমতম ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তার মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে রাতারাতি দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।
নিন্দা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। বিভিন্ন মহলের চাপে অবশেষে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্ষিত যুবতীর বাড়ির সামনের ব্যারিকেড তুলল উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। গোটা তিন দিন অর্থাৎ দীর্ঘ ৭২ ঘন্টা ধরে সংবাদমাধ্যমের একটানা নাছোড়বান্দা ঘোরাঘুরির পর অবশেষে পিছু হঠতে বাধ্য হলেন তাঁরা। শনিবার ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হলো সংবাদমাধ্যমকে।
তবে কি এর পেছনেও রয়েছে কোনো বড় উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন উঠছে এরকমই অনেক। শনিবার নির্যাতিতার মা, বোন, ভাই, বাবা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে যে, ঘটনার পর প্রায় তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত জ্ঞানশূন্য অবস্থায় ছিলেন মনিষা। এরপর অভিযুক্তার জ্ঞান ফিরলে, পরিবার তরফে পুলিশের কাছে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। কিন্তু পরিবারের দাবি, পুলিশের তরফে সেই অভিযোগের কোনো কপি তাঁদের হাতে দেওয়া হয়নি।
ঘটনার নারকো টেস্টের কথা উঠলে, ন্যায়ের আশায় যে কোনো পরীক্ষা করতেই রাজি আছেন পীড়িতার পরিবার। সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান,রাতের অন্ধকারে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার ৩ দিন পর চিতাভস্ম থেকে বাড়ির ছোট মেয়ের অস্থি সংগ্রহ করেন পরিবার। তরুণীর ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবারের সদস্যরা দেখতে চাইলে পুলিশের (ডিএম) তাতে রাজি হননি বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উওরে নির্যাতিতার ভাই বলেছেন, তাঁদের ওপর চাপ তৈরি করা হয়েছিল। ‘এখনও ভয়ে আছি’, বললেন নির্যাতিতার মা। নির্যাতিতার পরিবারের তরফ থেকে আরোও জানা গিয়েছে, ডিএম তাঁদের বলেন যে, আপনাদের অ্যাকাউন্টে ২৫ লক্ষ টাকা এসে গিয়েছে, তো চুপ করে থাকুন। আপনাদের মেয়ে করোনায় মরলে তো ক্ষতিপূরণ পেতেন না।
মেয়েকে ফিরিয়ে দিন, টাকা চাই না, বললেন নির্যাতিতার মা।ঘরের মেয়েকে কেন দাহ করার অধিকারটুকু দিল না যোগী-প্রশাসন? তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রশ্ন নির্যাতিতার মায়ের। প্রথম থেকেই দলিত কন্যার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
সংবাদমাধ্যমের কাছে ধর্ষিতার পরিবার জানালেন, ‘তাঁরা চান তাঁদের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত হোক সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে’। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তৈরি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) -ও ওই অভিযুক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছে বলেও গুরুতর অভিযোগ করেন পরিবার। খারাপ আচরনের পাশাপাশি তাঁদের খেতে না দেওয়া, এমনকি তাঁদের ফোন পর্যন্ত কেঁড়ে নিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাথরস সদরের এসডিএম প্রেম প্রকাশ মীনা। তাঁর বক্তব্য, ‘মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া সহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পরিবারের যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ সর্বোত পরিবারের সদস্যরা বলেন তাঁরা প্রশাসনের তরফে যা ব্যবহার পেয়েছেন তাতে তাদের পক্ষে কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন, ফলত: তাদের বাড়ির মেয়ের ন্যায়টুকু পাবার আশায় সিবিআই নয় সুপ্রীমকোর্টের তত্ত্বাবধানেই তদন্ত চান তারা।