দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু’র বাঙালি বিদ্বেষী মনভাবের কোনো পরিবর্তণ এখনো হয় নি। সম্প্রতি তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে একের পর এক বাঙালি বিদ্বেষী স্ট্যাটাস আপডেট করেছেন যেখানে ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর হীনমন্যতা।
যদিও কংগ্রেসের ‘তালেবর’ উপাধি ভূষিত এই প্রবীণ আইনজ্ঞর এই ধরণের প্রাদেশিক বিদ্বেষী মনভাবের পরিচয় দান এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০১৫ সালে তিনি সুভাষ চন্দ্র বোস ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেছিলেন তাঁর টুইটার পোস্ট এ। তিনি সেদিন লিখেছিলেন “”আমি শীঘ্রই কলকাতায় আসছি যেখানে আমি সেই ব্রিটিশের হাতের পুতুল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাপানি এজেন্ট সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি বক্তৃতা দেব। এটা একটা মৌমাছির চাকের মধ্যে পাথর ছোঁড়া হবে, আর অনেক বাঙালি আমার রক্তপাত ঘটানোর জন্যে হর্নেটের মত ভিড় করবে। কিন্তু তাদের অবশ্যই সত্যটা জানতে হবে। এই ঘটনা তাদের অনেক দূর ভ্রমণ করাবে।”
এছাড়াও সেই ২০১৫ সালের পোস্ট এ তিনি আরও বলেন যে “আমার মতে বসু একজন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি ছিলেন, এবং তিনি একজন ‘জাপানি এজেন্ট’ হয়ে গিয়েছিলেন কারণ গান্ধী বা হিটলার কেউই তাকে কোন ‘ভাও’ (পাত্তা) দেননি।
সেই সময়ে তাঁর এই মন্তব্য’র জন্যে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর ঠাকুরদা স্বর্গীয় কৈলাশ নাথ কাটজু বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং সেই সময়ে বাংলাতে ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের সরকার ছিল। সে কারণে বাংলার সাথে তাঁর যোগাযোগ একদিনের নয়।
ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটে আজ আবার। আজ সকালে দেখতে পাওয়া যায় কাটজু, তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে একের পর এক পোস্টে লিখেছেন, “বাঙালি আপনারা ভজন কীর্তন করো” , “বাঙালিরা ফিশ খায় না, তারা খায় পিশ”, “বাঙালি ইংরেজি শব্দ “এ” এর উচ্চারণ করতে পারে না, তাঁরা এটা উচ্চরণ করে ‘ও’। এই যেমন ধরুন তারা ‘Jal’ কে ‘jol’ বলে। এটার কারণ তাঁরা প্রচুর ‘রসগোল্লা’ আর সেই জন্য তাদের মুখ “ও” এর মত খোলা থাকে” এর পাশাপাশি তিনি এও লেখেন যে “যখন একটি সাধারণ বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তখন সেই শিশুটি কাঁদতে থাকে কিন্তু যখন একজন বাঙালি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার এক হাতে একটি লাল পতাকা থাকে আর আর এক হাত নাড়িয়ে বলতে থাকে “চলবে না চলবে না”


স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই ফেসবুকের ‘সিরিজ অফ পোস্ট’ নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নেটিজেনদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পোস্ট গুলি ভাইরাল হয়। বাঙালি নেটিজেন’রা তাঁকে যার পর নাই গালিগালাজ ও করে। বেগতিক দেখে তিনি পোস্ট গুলো ডিলিট করে দেন এবং সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ ১৯৬৫ সালের একটি ছবি শেয়ার করেন যেখানে একই ফ্রেমে ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়, মোরারজী দেশাই, ও তাঁর ঠাকুরদা কে এন কাটজু (তত্কালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী) কে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই ছবি যে কাটজু ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্যে আপলোড করেছেন সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না নেটিজেন দের।
এই পোস্ট দেখে এক বাঙালি একজন নেটিজেন তাঁকে প্রশ্ন করে বসে যে ” স্যার বাংলা ভাষার প্রতি আপনার এত বিদ্বেষ কেনো? কারোর ভাষা নিয়ে অনবরত মন্তব্য করে যাওয়া টা কী আপনার চোখে খুব শালিন ও আনন্দের?” উত্তরে কাটজু জানান, আমি সব ভাষাকেই সম্মান জানাই, যেগুলো আমি পোস্ট করেছি ওগুলো সবই জোকস বা ঠাট্টা ছিল”




যদিও কাটজু’র আজকের এই কীর্তিকে মোটেই ভালভাবে দেখছেন না বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা, তাদের বক্তব্য, সুপ্রীমকোর্টের মত একটি মহান প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়েও তিনি কিভাবে এরকম সস্তা প্রাদেশিক ঠাট্টা করতে পারেন। আসলে বাংলায় কংগ্রেসের ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াকে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। একদিকে এখনো যেমন তাঁকে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতীক স্বপ্নে তাড়া করে বেড়াচ্ছে তেমনি বাংলায় লালদুর্গ স্থাপনের ‘সদমা’ তাঁকে পুরপুরি গ্রাস করেছে, যে কারণে তিনি এখনো ‘লাল আমলেই’ পড়ে রয়েছেন।
যদিও মনস্তত্ববিদদের বক্তব্য, বার্ধক্যজনিত মানসিক সমস্যাতে ভুগছেন তিনি। এই সমস্যা তাঁকে ‘স্যাডিষ্ট’ বানিয়ে তুলছে, যেখানে তিনি তাঁর অবসর সময়ে মন্তব্য ও লোককে খোঁচা মেরে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধাচ্ছেন আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে মজা উপভোগ করছেন।
কাটজু’র ফেসবুক পেজে গেলেই বোঝা যায় যে তিনি শুধু বাঙালি’ই নয়, তামিল , কর্নাটকি মানুষদের নাম ও খাদ্যাভাস নিয়েও মজা করেছেন, তাই তাঁর এই আচরণ নিতান্তই বার্ধক্যের টাইম পাস ছাড়া আর কিছুই নয়।