দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হাথরাসে এক দলিত মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগকে “অসাধারণ এবং মর্মান্তিক” আখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারকে একটি হলফনামা দাখিল করতে বলেছে কিভাবে এই মামলায় সাক্ষীদের রক্ষা করা হচ্ছে। এই বিষয়টির শুনানি আগামী সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।
সিবিআই বা সুপ্রীমকোর্ট বা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে সিবিআই বা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তদন্ত চেয়ে দাখিল করা একটি পিটিশন শুনে ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বলেন, “ঘটনাটি খুবই অস্বাভাবিক এবং মর্মান্তিক। আমরা হলফনামায় জানতে চাই কিভাবে হাথরাস মামলার সাক্ষীরা সুরক্ষিত। আমরা চাই আপনি (সলিসীটর জেনারেল) নিশ্চিত করুন যে নির্যাতিতার পরিবার একজন উকিল কে বেছে নিয়েছে কিনা।
ইউপি সরকারের পক্ষে হাজির হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এই ঘটনার বিভিন্ন আখ্যান প্রদান করা হচ্ছে এবং শীর্ষ আদালতকে অবশ্যই তদন্ত তত্ত্বাবধান করতে হবে।
মেহতা বলেন “সেখানে আখ্যানের পর আখ্যান আছে কিন্তু বেদনাদায়ক সত্য এই যে একটি তরুণী তার জীবন হারিয়েছে। একটি তদন্ত হওয়া উচিত এবং এই উচ্চ আদালতের তা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।”
সিনিয়র কৌঁশুলি ইন্দিরা জয়সিং সাক্ষীদের সুরক্ষা এবং ইউপি থেকে বিচার স্থানান্তরের আবেদন করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই এই মামলায় কোন আইনজীবীর আবেদন করা উচিত নয়। এ বিষয়ে এসজি মেহতা বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা ইতোমধ্যে সুরক্ষিত। “সাক্ষী সুরক্ষার জন্য আপনার কোন আইনের প্রয়োজন নেই। তাদের রক্ষা করতে হবে,” মেহতা বলেন।
একজন সমাজকর্মী সত্যমা দুবে, এবং আইনজীবী বিশাল ঠাকরে এবং রুদ্র প্রতাপ যাদবের সম্মিলিত আবেদন যে এই বিচার প্রক্রিয়াকে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হোক এবং তাদের অভিযোগ এই যে ইউপি সরকার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ “অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে… …”।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চারজন উচ্চবর্ণের পুরুষের হাতে আক্রান্ত হওয়া দলিত মহিলা গত সপ্তাহে মারা যান, যা দেশজুড়ে বিরোধী দলগুলির পরিচালনাতে ব্যাপক জাতীয় ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের সৃষ্টি করে। বিরোধীদলগুলি, নির্যাতিতার পরিবারের সাথে জড়িত না হয়ে পুলিশের নেতৃত্বে মৃতার দেহ দ্রুত দাহ করার বিষয়টিকে সামনে রেখে ইউপির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আজ দিনের শুরুতে, তার হলফনামায়, উত্তর প্রদেশ সরকার শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই দ্বারা হাথরাস মামলার একটি তদন্ত দাবি করে। সরকারের মতে এমনটি হলে এটি নিশ্চিত করবে যে এই মামলা “মিথ্যা উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি না কোন মিথ্যাকে পশ্রয় বা মিথ্যা আখ্যান তৈরি করতে পারবে না”।
কথিত গণধর্ষণ এবং হামলার মামলা ছাড়াও সরকার জাতিগত দ্বন্দ্ব ছড়ানো, সহিংসতা এবং মিডিয়া এবং রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বারা ভয়ঙ্কর প্রচারণার ঘটনা সম্পর্কিত এফআইআরেরও সিবিআই তদন্ত চেয়েছে।
সরকারী হলফনামায় বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের কঠোর তদন্ত সত্ত্বেও, কিছু স্বার্থান্বেষী দলের নির্দেশে বিভিন্ন মিথ্যা আখ্যান গতি পেতে শুরু করে।”
ইউপি সরকার তাদের হলফনামাতে এই ‘ঘটনা’ ব্যবহার করে রাজ্যে জাতিগত/সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার একটি ইচ্ছাকৃত এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু অংশের সাথে সামাজিক প্রচার মাধ্যম, মুদ্রণ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছে।
হলফনামায় বলা হয়েছে, “সামাজিক, ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়া এবং রাজনৈতিক দলের কিছু অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে এবং সত্যকে উন্মোচন এবং দোষী সাব্যস্ত করার অনুমতি দিচ্ছে না।”
ইউপি সরকার আরো বলেছে যে “অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং বেআইনী ঘটনার ধারাবাহিকতা” জেলা প্রশাসনকে রাতে নির্যাতিতাকে দাহ করার অসাধারণ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে “পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে যারা আরো সহিংসতা এড়াতে সম্মত হয়েছে”।
ইউপি এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমারের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে, হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে যে একটি ভিডিও রেকর্ডিং আছে যেখানে মা এবং মেয়ে পরিষ্কারভাবে বলেছে যে সে তার ঘাড় ছাড়া অন্য কোথাও আহত হয়নি, অভিযুক্ত শুধু সন্দীপ এবং আর কিছুই ঘটেনি”।
হামলার আট দিন পর ২২ সেপ্টেম্বর এএমইউ হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর মহিলাটি কথিত যৌন নিপীড়নের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তার বক্তব্য রেকর্ড করার পর পুলিশ এফআইআরে ধর্ষণের প্রাসঙ্গিক অংশ যোগ করেছে।