দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: মালয়ালম সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত দিল্লির এক ৪১ বছর বয়স্ক সাংবাদিক সহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে বুধবার বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই) এবং এর ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (সিএফআই) সাথে তাদের যোগসূত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্তও করা হয়েছে।
মথুরার একটি টোল প্লাজা থেকে সোমবার বিকেলে উত্তর প্রদেশ পুলিশ তাদের আটক করে যখন তাঁরা হাথরাসে গত মাসে চারজন উচ্চবর্ণের পুরুষের হাতে নির্মমভাবে আক্রান্ত এবং গণধর্ষণের অভিযোগে মৃত দলিত মহিলার আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন।
এই সাংবাদিককে কেরালা ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস (কেইউডব্লিউজে) এর সেক্রেটারি সিদ্দিক কাপ্পান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি `azhimukham.com নামক মালয়ালম সংবাদ ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন। তিনি বর্তমানে মথুরা পুলিশের প্রতিরোধমূলক হেফাজতে আছেন। কাপ্পান ছাড়াও সিএফআই অফিসের কর্মকর্তা আতিক-উর-রহমান এবং মাসুদ আহমেদ আলম নামে আরেকজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
ইউএপিএ (UAPA) প্রাথমিকভাবে একটি সন্ত্রাস বিরোধী আইন- যার উদ্দেশ্য হচ্ছে “ব্যক্তি এবং সংগঠনের কিছু বেআইনী কার্যকলাপকে আরো কার্যকর ভাবে প্রতিরোধ করা এবং সাথে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মোকাবেলা করা”।
যদিও কাপ্পান কেরালার বাসিন্দা এবং বছরের পর বছর ধরে দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় বসবাস করছেন, রহমান মুজাফফরনগরের বাসিন্দা, বাহরাইচের আহমেদ এবং রামপুরের আলম।
মথুরার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা বলেছে যে তারা দিল্লি থেকে হাথরাস যাচ্ছিল নির্যাতিতার পরিবারের সাথে দেখা করতে এবং পরিবারের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে এবং তাদের ‘ন্যায়বিচার’ দিতে চেয়েছিল।”
মথুরার এসএসপি গৌরব গ্রোভার বলেন -“সোমবার সকালে মান্ত টোল প্লাজায় চেক করার সময় আমরা একটি সুইফট ডিজায়ার গাড়ির গতিবিধিকে সন্দেহজনক দেখতে পাই। আমরা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং তাদের সিআরপিসি ১৫১ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মনে হচ্ছে তারা হাথরাসের দিকে যাচ্ছিল। যদিও তাদের বিরুদ্ধে কোন এফআইআর দায়ের করা হয়নি, তারা বলেছে যে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা পিএফআই এবং সিএফআই এর সাথে সম্পর্কিত।”
মথুরা পুলিশ দাবি করেছে যে তারা ল্যাপটপ, ফোন এবং বেশ কিছু সাহিত্য উপাদান বাজেয়াপ্ত করেছে যা এলাকার আইনশৃঙ্খলাকে “প্রভাবিত” করতে পারে।
অন্যদিকে azhimukham.com সংবাদ পোর্টালের সম্পাদক এন অশোক বলেন, কাপ্পান জানুয়ারি মাস থেকে দিল্লি-এনসিআর-এ তাদের জন্য লিখছেন। সোমবার, কাপ্পান তাঁকে মেসেজ করে বলেছে যে সে একটা খবরের জন্যে হাথরাসে যাচ্ছে। আমি জানি না তার সাথে থাক আর তিনজন করা বা কে। গতকাল সন্ধ্যায় এন অশোক তাকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু লাইনে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁরা জানতে পারেন যে মথুরা পুলিশ তাকে আটক করেছে।
কেইউডব্লিউজে-এর প্রাক্তন সম্পাদক সাংবাদিক মণিকান্তন জানান, দুপুর ২টার দিকে কাপ্পানকে টোল প্লাজা থেকে আটক করা হয়। “কাপ্পান এ বছর azhimukham.com জন্য লেখা শুরু করেছে। পিএফআই-এর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। আগে তিনি দিজাসের জন্য লিখতেন, যা পিএফআই-এর একটি মুখপত্র। এটি একটি আর্থিক মন্দার কারণে ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি তার চাকরি হারান। এরপর তিনি থালসায়াম নামে আরেকটি সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন, যা গত বছরও বন্ধ হয়ে যায়,” বলেন মণিকান্তন।
এদিকে কুডাব্লিউজে-এর দিল্লি ইউনিট কাপ্পনের আটক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইউপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে একটি চিঠি লিখেছে। ইউনিয়নের দিল্লি ইউনিট বলেছে -“আমরা একজন সাংবাদিককে অবৈধভাবে আটকে রাখার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছি, যিনি তাঁর কাজ করছিলেন… আমাদের দেশের সংবিধান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করে। কাপ্পানের গ্রেফতার সাংবিধানিক মূল্যবোধের লঙ্ঘন।”
কেইউডাব্লিউজে প্রেসিডেন্ট মিজি জোসে স্বাক্ষরিত ইউপি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, “তিনি KUWJ এর সেক্রেটারি… এবং সোমবার সকালে হাথরাসে গিয়েছিলেন এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কভার করতে… আমরা বুঝতে পেরেছি যে হাথরাস টোল প্লাজা থেকে ইউপি পুলিশ তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। দিল্লিতে অবস্থিত কিছু আইনজীবীর প্রচেষ্টা এবং তার সাথে যোগাযোগের প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়াও একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে এই বলে যে কাপ্পানকে “দেরি না করে ছেড়ে দেওয়া উচিত”। “এটা আমাদের আশঙ্কা যে যোগী আদিত্যনাথ সরকার তার সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বেদনাদায়ক হাথরাসের ঘটনার ব্যাখ্যা হিসেবে, পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক সন্দেহজনক, সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভার্চুয়াল নীরবতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভ্রান্তিকর কৌশল অবলম্বন করবে।
বাহরাইচের অতিরিক্ত এসপি কে জ্ঞানঞ্জয় সিং বলেন, “মাসুদ আহমেদ (২৩) নামে ওই যুবক জারওয়াল এলাকার বাসিন্দা। পিএফআই, সিএফআই এবং এসডিপিআই-এর মতো সংগঠন ধর্মীয় উত্তেজনা উস্কে দেওয়া, দাঙ্গার ষড়যন্ত্র, শান্তি বিঘ্নিত করার মত একই মতাদর্শের উপর কাজ করে। এই ব্যক্তিকে মথুরায় আটক করা হয়েছে; অতীতেও অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে ভূমি পূজার সময় দাঙ্গা শুরু করার চেষ্টার অভিযোগে পিএফআই এবং এসডিপিআই-এর সাথে যুক্ত জারওয়াল এলাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যোগী সরকার সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করে নিজেদের গুণ্ডামিকে প্রশ্রয় দিতে চাইছে।