দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ‘বাবা কা ধাবা’ খাবারের লাইনে এখন গোটা দিল্লী বাসী! ৮০ বছরের বৃদ্ধ দোকানদারের চোখের জলের দাম দিল সাধারণ জনগণ। চারপাশে করোনা মহামারীর রেশ। মহামারী যেন আমাদের জীবনের এক অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মহামারী কেড়েছে অনেক কিছু। এর ফলে কতো মানুষ যে কাজ হারিয়েছে তার হিসেব নেই। আর সেই খাতায় নাম লেখালেন আশি বছরের এক বৃদ্ধ দম্পতি তথা ছোট্ট একটি ধাবার মালিক। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া দেখলো তার শক্তি। তার ব্যাপ্তি। কিভাবে চোখের জল মুছিয়ে হাসি ফিরিয়ে আনা যায়।
মহামারীর কারনে অনেক দিন দোকান বন্ধ রেখে না খেতে পেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন দিল্লীর এক বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরপর আনলক পর্যায় শুরু হওয়াতে তাঁরা দোকান খোলেন। দোকান খুললেও তাতে দেখা নেই কোনো জনমানুষের। চোখের কোনে জল নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন এই ধাবা দম্পতি যুগল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট হয়। আর তাঁর পরেই তা ভাইরাল। তাঁর পর আর কি! সোশ্যাল মিডিয়ার আমজনতা থেকে তারকা মহলেও পৌঁছে যায় এই দম্পতির আর্জি। এরপর একের পর এক পোস্ট। আর তাঁর কয়েক ঘণ্টা পরই দোকানে উপচে পড়ল ভিড়।
ঠিক কি ঘটেছিল? করোনায় আবহে বহু দোকান-পাট তো বন্ধই আর তাঁর সাথে দীর্ঘদিন লকডাউন চলায়, রাস্তা ঘাট, অফিস-কাছারি, স্কুল, রেঁস্তোরা, সিনেমা হল সবই বন্ধ। দিল্লীর ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী দক্ষিণ দিল্লীর মালব্য নগরের একটি ছোট্ট খাবারের দোকান থেকেই দিন গুজরান করেন। কিন্তু গত পরশু পর্যন্ত ও কোনও খোদ্দের ছিল না তাঁর দোকানে। দিন শেষে যা রোজগার তাতে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার খেয়ে দিন কাটানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। দীর্ঘ আশি বছরের লড়াই। কালের নিয়মে বয়সের ছাঁপ পড়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে এসে এত বড় কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হয়ে আর লড়তে পারছিলেন না তিনি।
কিন্তু গত বুধবার টা একটু অন্যরকমভাবেই লিখেছিলেন ঈশ্বর। রোজকার দিনের মতো সেদিনও সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে দোকান খুলেছিলেন। কথায় কথায় কদাচিত দোকানে দোকানে আসা এমনই এক খোদ্দেরের কাছে নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধ দোকানদার। আর সেই মুহূর্তের ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন সেই খোদ্দের, যা সোশ্যাল মিডিয়ার ময়দানে আসা মাত্রই হয় ভাইরাল। তাদের দোকানে আসা সেই দেবদূতের নাম আশুতোষ। তিনি থাকেন দক্ষিণ দিল্লী তেই।
দক্ষিণ দিল্লীর ছোট্ট ধাবাটির নাম ‘বাবা কা ধাবা’। ধাবার পরিচালক ৮০ বছরের বৃদ্ধ দম্পতি। বৃদ্ধের নাম কান্তা প্রসাদ। রাস্তার ধারে হনুমানজির মন্দিরের উল্টো দিকেই তাঁর সেই ছোট্ট ঘুমটি দোকান। ১৯৯০ সাল থেকে দোকান চালান ৮০ বছরের কান্তা প্রসাদ। ভাত, তরকা ডাল, চিকেন, হাতে তৈরি রুটি, সোয়া কারি পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। এই সব খাবারই হাতে বানান ওই দম্পতী নিজেরাই। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে একেবারে বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দিন দোকান বন্ধ রেখে না খেতে পেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন তাঁরা।
যে দোকানে আসা আশুতোষ খাবার কিনতে চান। গিয়ে দেখেন সব খাবার রেডি। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। কত টাকা রোজগার হচ্ছে দিনে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেওয়ার আগে, বাক্স খুলে কটা ১০ টাকা এবং কুড়ি টাকার নোট বের করে দেখান। তিনি এ কটা টাকাই রোজগার করতে পেরেছেন। এই কথা বলতে গিয়েই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন ওই বৃদ্ধ। আর তখনই তিনি ব্যাক্তি গোটা ঘটনার ভিডিও করে তাঁর টুইটারে শেয়ার করেন।
৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধকে পেট চালানোর জন্য কাঁদতে দেখে, গোটা ভারতের চোখে জল আসে।বৃদ্ধ বলেছেন,তাঁর স্ত্রীয়ের শরীরও ভালো নেই। টাকা নেই বলে ডাক্তার দেখাতেও পারছেন না। যিনি ভিডিয়োটি করেন তিনি ওই বৃদ্ধ দোকানদারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভিডিওটি তৈরী করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়ার পর তা হু হু করে ভাইরাল হয়ে যায়। তারকা থেকে সাধারন মানুষ সবাই এখন তাঁদের পাশে। কান্নায় ভেঙে পরা এই মানুষ দুটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারকারা অনুরোধ করেছেন দিল্লীবাসীকে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন রবিনা ট্যান্ডনও।
ইতিমধ্যেই “বাবা কা ধাবায়” যেন জনমানুষের ভীড় উপছে পড়ছে। খাবার বানিয়ে কুলোতে পারছেন না ওই দম্পতি। দম্পতির পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানুষের ভীড়। খাবার ডেলিভারী কোম্পানীগুলিও সাহায্যের হাত দিয়েছে। গোটা দিল্লীর মানুষ এগিয়ে এসেছেন। সকলেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। না হলে আজ মানুষ জানতেই পারতেন না ‘বাবা কা ধাবা’ -র বৃদ্ধ দম্পতির ঘটনা। করোনা অনেক কিছু শিখিয়েছে আমাদের। তবে মানুষের মানবিকতার জয় কিন্তু সবার আগে।