দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সিবিআইয়ের হাতে হাথরস কাণ্ডের তদন্ত ভার গিয়েছে। কেন্দ্রের তরফে শনিবার এক বিবৃতি জারি করে তদন্ত ভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে উত্তরপ্রদেশের ১৯ বছর বয়সী যুবতী খুনের ঘটনা রোজই যেন নতুন মোড় নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, সারা দেশ জুড়ে জুড়ে যখন এই মামলাটিকে গণধর্ষণ ও নৃশংস হত্যা বলে প্রচার চলছে তখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কিন্তু উল্টো কথা বলছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী নির্যাতিতার শরীরে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন ছিল না। এমনকি উত্তরপ্রদেশের পুলিস তাই জানিয়ে দিয়েছিল, বুলগড়ী গ্রামের মেয়ের গণধর্ষণ হয়নি। তবে তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করার কথা স্বীকার করেছে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসন বার বার বলেছে, এই ঘটনাকে ভুল ব্যাখা করে ও ভিন্ন আঙ্গিকে দেখিয়ে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে কিছু ষড়যন্ত্রকারী। আর তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের পুলিস, প্রশাসন। কিন্তু তাদের সেই দাবিকে নস্যাত করেছেন বেশ কিছু অ্যাক্টিভিস্ট সহ দেশের বিভিন্ন বিরোধী দল। কিন্তু এই মূহুর্তে যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনের সেই দাবি কিছুটা সঠিক বলেই মনে হচ্ছে।
জেনে নেওয়া যাক ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাতে চাঞ্চল্য তৈরি হতেই নির্যাতিতার বাড়ির চারপাশে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিস। এমনকী সিভিল ড্রেসে পুলিস সেই বাড়ির পাহারায় রয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনকে প্রায় নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। আর এই সিসিটিভি আসার পর থেকেই নির্যাতিতার বাড়ি থেকে একের পর আত্মীয়-পরিজন ফিরে যেতে শুরু করেছে। আর এই বিষয়টায় পুলিশের কাছে রহস্যময় ঠেকেছে।
এই রহস্যের গন্ধ পেয়ে CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখে এরই মধ্যে একটি তথ্য সামনে এসেছে, জানা গিয়েছে এতদিন পর্যন্ত নির্যাতিতার বৌদি হিসেবে পরিচয় দেওয়া ‘সেই মহিলা’ আসলে নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেত্রী! এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন সিংবাদ মাধ্যমের সামনে ওই মহিলা নির্যাতিতার বৌদি সেজে বয়ান দিতেন। এমনকী নির্যাতিতার পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসআইটি-র (SIT) এর সামনেও ছিলেন সেই মহিলা। তিনি বিন্দাস পুলিশের সামনেও দিনের আলোয় ঘুরে বেড়িয়েছেন।
পুলিশের সন্দেহ হওয়ার আগেই যদিও SIT ‘এর সদস্যদের সবার সন্দেহ হয়েছি। তার পরই পুলিস ওই ছদ্মবেশী মহিলার পরিচয় খুঁজতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে। পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, জব্বলপুরে সুভাষচন্দ্র বোস মেডিকেল কলেজের অধ্যাপিকা তিনি। পূর্বে নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর আসল নাম রাজকুমারী বানসাল। থাকেন জামালপুরে।


মহিলার পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই ওই মহিলা দাবি করেছেন, তিনি আসলে মানবিকতার খাতিরে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনের কাছাকাছি চলে আসেন। গণধর্ষণ ও খুনের এই ঘটনার কথা জানার পর পরই তিনি হাথরসের বুলগড়ী গ্রামে আসেন। অন্যদিকে এই রহস্যময়ী মহিলার পরিচয় নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, ওই মহিলা তাঁদের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়া। পরিবারের এমন বিপদের দিনে আর পাঁচজন আত্মীয়ের মতো তিনিও এখানে এসে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ও পুলিশ এবং মিডিয়ার সাথে কথাও বলেছিলেন।
এই মহিলার পরিচয় সামনে আসতেই, যোগী সরকারের দাবি যে কিছুটা অক্সিজেন পেল সে বলাই বাহুল্য। অনেক বিশেষজ্ঞ এই বলছেন যে দিল্লিতে স্বরা ভাস্কর সহ বহু বাম মনষ্ক মানুষদের এই আন্দোলন নিয়ে সরব হতে দেখে পুলিশের এই নকশাল যোগের কথা আগে মাথায় আসে। তবে দিন যত গড়াচ্ছে, এই মামলা আরও জটিল হচ্ছে।