ধর্ম কি মনুষ্যত্বের ওপরে! এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলা ভার। উত্তর থাকলে হয়তো আজ এমন ঘটনার সাক্ষী থাকতো না প্যারিস। প্রকাশ্য দিবালোকে মাথা কেটে হত্যার শিকার হতেন না এক শিক্ষক। ধর্মগুরুর কার্টুনচিত্র দেখানোয়, প্যারিসে গলা কেটে খুন হলেন এক স্কুল শিক্ষক। সূত্রের দাবি, নিহত ওই শিক্ষক প্যারিসের কনফ্লাস সেইন্ট হোনোরাইনের একটি স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক। শুক্রবার উত্তর-পশ্চিম প্যারিসের এরাগনিতে সেই ঘটনা ঘটেছে। এদিন ক্লাসে ছাত্রদের ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয় সম্পর্কে পড়ানোকালীন ইসলাম ধর্মগুরু হজরত মহম্মদের একটি কার্টুন চিত্র (ব্যাঙ্গচিত্র নয়) ছাত্রদের সন্মুখে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
যার ফলস্বরূপ প্যারিসের রাস্তায় প্রকাশ্য রাস্তায়,তার মাথা কেটে তাকে হত্যা করা হয়।হত্যার সময় হত্যাকারীর মুখে ছিলে ‘আল্লাহু আকবর’ রব। যদিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয় তার। পুলিশি তরফে ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যার মধ্যে একজন নাবালকও ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঘটনায় ক্লাসে থাকা এক ছাত্রের অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে বলেছে শিক্ষক হিসেবে উনি যথেষ্ট ছাত্রপ্রিয় ছিলেন। সেদিন ক্লাসে উনি কিছু মুসলিম ছাত্রদের বলেন, আমি চাই কিছুক্ষণের জন্য তোমরা ক্লাসের বাইরে যাও , কারণ তোমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।” সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত ৯ অক্টোবর একাধিক টুইট করা হয়েছিল। তাতে অভিযোগ করা হয়েছিল, হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। সেই টুইটের মধ্যে একটি ভিডিয়োও ছিল। তাতে সে দাবি করে, তার মেয়ে ক্লাসে ছিল। শিক্ষকের আচরণে তার মেয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তবে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। একইসঙ্গে পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, আততায়ী একটি ধর্মের স্লোগান দিচ্ছিল। তবে পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেই তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনও যোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে ফ্রান্সের সন্ত্রাস দমন শাখা। এক পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, সন্দেহভাজন আতাতায়ীর হাতে একটি ছুরি এনং এয়ারসফট গান ছিল। যেখানে ওই শিক্ষককে খুন করা হয়েছে, তার ৬০০ মিটার দূরেই সন্দেহভাজনকে নিকেশ করেছে পুলিশ।
গোটা ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি,স্হানীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গোটা দেশ শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবে’। পাশাপাশি তিনি জানান, এঘটনার পরই একটি জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়াও ফরাসি অভ্যন্তরীণ বিষয় মন্ত্রকের পহ্ম থেকেও গোটা বিষয়টিতে কড়া নজর রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য এই ঘটনা ২০১৫ সালে প্যারিসের শার্লে এবেদ’র আক্রমণের সাথে তুলনীয়। যেখানে ম্যাগাজিনটির সম্পাদক, কয়েকজন কার্টুনিস্ট, পুলিশসহ মোট ১২ জন নিহত হন। সেখানেও ব্যাঙ্গ চিত্র আঁকার জন্যে ধর্মান্ধ জঙ্গিরা সেদিন গুলি করে মেরেছিল। ইসলামের নবী মোহাম্মদের কাটুন প্রকাশ করায় এর আগেও শার্লে এবদো পত্রিকাটি মুসলমানদের রোষানলে পরেছিল।