দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এই নিয়ে টানা তিনবার, বেছে বেছে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মাবলম্বীদের, বিশেষ করে গির্জার সাথে যুক্ত মানুষদের হত্যা করছে ইসলামিক জঙ্গিরা। আবারও মুসলিম মৌলবাদীদের লক্ষ্যে ফ্রান্স ! আরও একবার হামলা চালানো হল চার্চের কাছে। এবার আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত এক গ্রিক ধর্মযাজক। সংকটজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে তাঁর।
পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধে নাগাদ ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরের কেন্দ্রস্থলে ঘটনাটি ঘটেছে। এদিন সন্ধেবেলা অন্যদিনের মতোই চার্চে যাচ্ছিলেন ওই গ্রিক ধর্মযাজক। চার্চের একেবারে কাছেই তাঁকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালায় আততায়ী। যাজক লুটিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পালায় ওই দুষ্কৃতী। পথ চলতি সাধরণ মানুষদের সহায়তাতে ওই যাজককে স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আততায়ীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই ফ্রান্সে নিয়মিত ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটছে। গত ৭২ ঘণ্টায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার গির্জাতে হামলা করলো কট্টর্পংঠি ইসলামিক দুষ্কৃতীরা। এর আগে গত পরশু ফ্রান্সের নিস শহরের ঐতিহাসিক নোতরদাম গির্জায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা এক মহিলা ও এক পুরুষের মাথা কেটে দিয়েছিল। গতকালের ঘটনাও ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদেরই কীর্তি জানিয়েছে ফ্রেঞ্চ পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বারবার জঙ্গিদের নিশানাতে ফ্রান্সের আসার কারণ নবীর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের তা নিয়ে করা প্রতিক্রিয়া। উল্লেখ্য, পড়ুয়াদের বাক স্বাধীনতার পাঠ দিতে হজরত মহম্মদের একটি ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন ফ্রান্সের এক ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল পটি। আর সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিত, গত ১৬’ই অক্টোবর প্যারিসের বুকে এক শিক্ষককে মাথা কেটে খুন করে এক চেচেন মুসলিম জঙ্গি।
এই নৃংশসভাবে হত্যাকে ‘ইসলামিক মৌলবাদের’ স্বরূপ বলে তোপ দেগেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওই মৃত শিক্ষককে ‘নায়ক’ বলে মন্তব্য করেন। হামলার ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদ’ ও ‘ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী হামলা’র মতো শব্দ ব্যবহার করেন তিনি। তারপর থেকেই গোটা মুসলিম বিশ্বের রোষের মুখে পড়েছে ফ্রান্স।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে নিয়মিত ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা চালাচ্ছে আততায়ীরা। বাধ্য হয়েই ম্যাক্রোঁ ফের মুখ খুলেছেন। গতকাল এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন,’আমি আপনাদের আঘাতের জায়গাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু হিংসা বন্ধ হোক। কোনওভাবেই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেব না। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। তার জন্যে যদি আরও কঠোর হতে হয় হব।’
অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্রান্স কনসুলেটের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। কোনও কোনও দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান আবার এও মন্তব্য করেছেন ” মুসলিমদের অশিকার রয়েছে ফ্রান্সের মানুষদের হত্যা করার”। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি যে দিকে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্ব ও অমুসলিম বিশ্বের মধ্যে সংঘাত না বেধে যায়। এই বিষয়ে সকলকেই সংযম পালন করতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।