দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এবার চীনা দ্রব্য নয় বরং চীনা টিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠল ব্রাজিলে। সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরোতে টিকার ট্রায়ালের বিরুদ্ধে পথে নামলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেই জুলাই মাস থেকেই ব্রাজিলে করোনার টিকার ট্রায়াল করছে চীনের প্রথম সারির ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থ ‘সিনোভ্যাক’। সাও পাওলোর বুটানটান ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে কয়েক হাজার মানুষকে টিকার ডোজ দিচ্ছে ‘সিনোভ্যাক’।
এই চীনা করোনা টিকার ব্রাজিলের হেলথ রিসার্চ সেন্টার বুটানটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাও পাওলোতে টিকার তৃতীয় স্তরের ট্রায়াল চলছে। রবিবার সন্ধে থেকেই সাও পাওলোর রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সাধারণ মানুষজন। মুখে টিকা-বিরোধী স্লোগান। সাও পাওলোর গর্ভনর জোয়াও ডোরিয়ার অপসারণ চেয়ে জোর আন্দোলন শুরু হয়েছে ব্রাজিলে। সূত্রের খবর, টিকা-বিরোধী আন্দোলনে প্রচ্ছন্ন মদত আছে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর।
বুটানটান ইনস্টিটিউটের প্রধান ডিমাস কোভাস জানিয়েছেন, সিনোভ্যাকের টিকা করোনাভ্যাকের ভাল ফল দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে। প্রথম পর্যায়ে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হয়েছিল। এখন দেশের ছ’টি রাজ্যে টিকার ট্রায়াল চলছে। আপত্তি উঠেছে এখানেই। আমজনতার অভিযোগ, জোর করে টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত সাও পাওলোর গর্ভনরের নির্দেশেই হাজার হাজার মানুষকে চীনের টিকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত মাসে ঘোষণা করেছে যে তারা ৪৬ মিলিয়ন ডোজ এই টিকা কিনবে, যা নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের উপর একটি চুক্তি, রাষ্ট্রীয় গভর্নরদের দ্বারা সমর্থিত একটি চুক্তিতে। কিন্তু একদিন পরে ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো বলেন যে ব্রাজিল এই টিকা কিনবে না। ২০১৮ সালে প্রচারাভিযানের পর থেকে বোলসোনারো চীনকে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়েছে, যেখানে এশিয়ার দেশগুলো ব্রাজিলে বিনিয়োগ এবং প্রভাব বৃদ্ধি করছে।
সাও পাওলোর বিক্ষোভকারীরা বোলসোনারোর সমর্থনে সমাবেশ করেছে। একজন বিক্ষোভকারী “আমরা গিনিপিগ নই” এবং আরেকটি মুখোশ পরে লেখা ছিল “কোন টিকা নেই”। এমনকি জমায়েত কড়া বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মুখোশ পরেনি। “আমরা স্বৈরাচারী চীনা রাষ্ট্রদূত জোয়াও ডোরিয়ার বিরুদ্ধে, যিনি এখন আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই টিকা বাধ্যতামূলক করবেন,” বলেন বিক্ষোভকারী আন্দ্রে পেত্রোস। “এটা বিশ্বের কোথাও ঘটে না, এমনকি চীনেও না।” বলেন আরেক প্রতিবাদী।
বুটানটান ইনস্টিটিউটকে ইতিমধ্যেই ৬০ লক্ষ ভ্যাকসিনের ডোজ দিয়েছে সিনোভ্যাক। প্রতিবাদকারীদের দাবি, সিনোভ্যাকের টিকা চীনের ভ্যাকসিন রেগুলেটরি কমিটির অনুমোদন পেয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করে জানা যায় নি। চীন এমনিতেই জরুরি ভিত্তিতে নিয়ম ভেঙে গণটিকাকরণ শুরু করে দিয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবেই বহু মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ব্রাজিলেও সেই একই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। প্রাণের ঝুঁকির কথা ভাবছেন না প্রশাসনের কর্তারা।
সারা বিশ্বে তাদের তৈরি টিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (হু) প্রস্তাব দিয়েছে চীন। সূত্রের খবর, চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের আগেই গণহারে টিকা দিতে শুরু করে দিয়েছে চীন। তিন রকমের কোভিড ভ্যাকসিনের প্রয়োগ হচ্ছে। যে কোনও বয়সের মানুষের শরীরেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ মানুষজনকেই টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
চীনের প্রথম সারির ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা সিনোভ্যাক দাবি করেছে শুধুমাত্র বেজিংয়ে দশ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রদেশে আরও কতজনকে চুপিচুপি টিকা দেওয়া হচ্ছে সে খবর সামনে আসেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্রাজিল বিশ্বের সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।