দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার ছটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে অন্তত দুজনকে হত্যা করেছে আর এই নৃশংস ঘটনায় আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জ এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যায়িত করে জানিয়েছেন যে বন্দুকবাজ-জঙ্গিদের একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের গুলইতে মারা গিয়েছে একজন পুলিস কর্মী। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন হামলাকারীদের একজনকে এখনো খুঁজছে পুলিশ। ভিয়েনায় ইহুদিদের প্রধান প্রার্থনাকেন্দ্রের কাছে গুলির ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীদের মূল টার্গেট সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভিয়েনা শহরের মেয়র মিখাইল লুডভিগ জানিয়েছেন, নিহতদের একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আহত এক মহিলা হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে আরও অন্তত ১৪ জন হাসপাতালে আছে যার মধ্যে ছয়জনের অবস্থা মারাত্মক। আহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও আছে। বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে দেশতে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। হামলার সময়ে অধিকাংশ মানুষই তখন পানশালা ও রেস্তোরাঁয় ছিলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ ইউরোপের নেতারা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
অস্ট্রিয়া’র স্থানীয় সময় রাত আটটায় গুলি শুরু হয়। পুলিশ বলছে ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছে ইহুদিদের একটি সিনাগগের কাছে যা শহরটির প্রধান উপাসনালয় হিসেবে সুপরিচিত। ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা ওসকার ডাচ টুইট করে বলেছেন, স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে (জিএমটি: সন্ধ্যে ৭ টা) হামলা শুরুর সময়ে সিনাগগটি বন্ধ ছিলো। তবে ক্রনেন যেইটাং নামে একটি পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে, সিনাগগ প্রহরার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে কতজন হামলাকারী এ হামলায় অংশ নিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রিয়ার গণমাধ্যম বলছে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের তল্লাশির সময় এক ব্যক্তি, নাম ক্রিস ঝাও এর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ভিডিওতে গুলির শব্দ শোনা গেছে ও এবং রাস্তায় লোকজনকে দৌড়াতে দেখা গেছে। গুলি শুরুর সময় কাছেই একটি রেস্তোরাঁয় ছিলেন ক্রিস ঝাও। তিনি বলছেন, “আমরা আতশবাজির মতো কিছু শব্দ শুনছিলাম। ২০-৩০ টি শোনার পর আমরা ভাবলাম বন্দুকের গুলি। এরপর আমরা অ্যাম্বুলেন্স দেখলাম। কাছেই রাস্তায় একজনকে পড়ে থাকতে দেখেছি”।
এই ঘটনায় অস্ট্রিয়ায় বড় ধরণের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এলাকাবাসীকে ওই এলাকা এড়িয়ে যেতে ও গণপরিবহন ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ চেক প্রজাতন্ত্রের পুলিশ বলছে হামলাকারীরা এ পথ ধরে আসতে পারে আশঙ্কায় তারা অস্ট্রিয়া সীমান্তে তল্লাশি শুরু করেছে। এই ঘটনা কট্টরপন্থী তুরস্কের ‘ইসলামিক জঙ্গি’দের কাজ হতে পারে। কারণ এই সন্ত্রাসী হামলার ঠিক এক দিন আগেই ভিয়েনার এক মসজিদে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্য। এমনকি ওই মসজিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ঘটনাটি এরকম ছিল, ভিয়েনার এক মসজিদে তুর্কী পতাকা হাতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক ঘটনা তুলে ধরেছিল একদল শিশু। বিষয়টি অস্ট্রিয়ার সরকারকে ক্ষিপ্ত করেছে। প্রয়োজনে অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী মসজিদটি বন্ধ পর্যন্ত করে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছিল সরকার। অস্ট্রিয়ার ইসলামিক এসোসিয়েশন বলেছে, এই কেলেংকারি অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আর এর পরেই এই জঙ্গি হামলা ওই ঘটনারই প্রতিক্রিয়া বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, তুরস্কের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সম্পর্ক বহুদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। অস্ট্রিয়ার বর্তমান সরকার তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেওয়ার বিরুদ্ধে। অতীতে তারা তুরস্কের EEU-তে যোগ দেয়ার আলোচনা ভেঙ্গে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে, যে কারণে দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি এমনিতেই অগ্নিগর্ভ, সেখানে এই হান আগুনে ঘৃতাহুতি করলো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।