দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সুখবর দিল জার্মানির এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কিওরভ্যাক। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে এনে কিওরভ্যাক দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির পাশাপাশি অতিপ্রয়োজনীয় টি-কোষও সক্রিয় করেছে। এই টিকা মানুষের শরীরেও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। অন্যদিকে অতিপ্রত্যাশিত জার্মানির বায়োএনটেকের কোভিড টিকার ট্রায়াল শেষ পর্যায়ে। তারা মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজারের সঙ্গে টিকার ট্রায়াল করছে। উল্লেখ্য, কিওরভ্যাকও মোডার্না ও ফাইজারের মতোই মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA)সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে টিকা তৈরি করেছে।
এই ভ্যাক্সিন প্রসঙ্গে কিউরভ্যাক সংস্থার চিফ একজিকিউটিভ অফিসার ফ্রানজ-এয়েরনার হাস বলেছেন, তাদের টিকাতে ব্যবহৃত আরএনএ (RNA) ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের নাম CVnCoV। জার্মানিতে এখন এই টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। প্রথম পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট সন্তোষজনক। প্রবীণদের শরীরেও এই টিকা কার্যকরী হয়েছে বলে দাবি।
ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে প্রথম পর্যায়ে মোট ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এই টিকার ইঞ্জেকশন দিয়েছিল কিওরভ্যাক। স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬০ বছর। ভাইরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, ১২ মাইক্রোগ্রামের একটি শট দেওয়ার পরে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রথম শটের ২৯ দিন পরে দ্বিতীয় শট দেওয়া হয়। প্রথম শটেই রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। তারা বলছেন, পেরু ও পানামাতে প্রবীণদের শরীরে এই টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। বয়স্কদের শরীরেও টিকার ডোজে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের।


এই ট্রায়াল ও তার ফলাফল প্রসঙ্গে কিওরভ্যাকের দাবি, এই আরএনএ (RNA) ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট মানুষের শীরে ঢুকে অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স (অভিযোজনীয় অনাক্রম্যতা) তৈরি করেছে। বি-কোষকে (B-Cell) সক্রিয় করে রক্তরসে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, সক্রিয় হয়েছে টি-লিম্ফোসাইট (T-Lymphocite) কোষও। সার্স-কভ-২ (SARSCoV2) ভাইরাল স্ট্রেনকে নিষ্ক্রিয় করতে গেলে এই টি-লিম্ফোসাইট কোষকে জাগিয়ে তোলা দরকার। ভ্যাকসিনের ডোজে এই টি-কোষকে অ্যাকটিভ করার চেষ্টাই চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এই অতিপ্রয়োজনীয় টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ তৈরি হয় হেমাটোপোয়েটিক স্টেম কোষে। বেড়ে ওঠে থাইমাসে। এর কাজ হল রক্ষীর মতো। মানুষের জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি, এই টি-কোষ শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখার চেষ্টা করে। অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজও এই কোষেরই। টি-সেলের রিসেপটর (TCR) ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রামক প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে তাদের নষ্ট করে দেয়।
সাধারণভাবে দেখা গিয়েছে CD8 রিসেপটর প্রোটিন যুক্ত হলে টি-কোষ সাইটোটক্সিক হয়ে ওঠে, তখন তাকে বলে ঘাতক কোষ। এই কোষের কাজ হয় ভাইরাল প্রোটিন সমেত সংক্রামক কোষকেই নষ্ট করে ফেলা। CVnCoV টিকা সেই কাজই করছে বলে দাবি গবেষকদের। গবেষকদের এই দাবি যদি সত্যিই সত্যিই কাজ দিয়ে থাকে তাহলে আশা করাই যায় যে আসন্ন দিনে করোনা’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের হাতে অনেক গুলো অস্ত্র’ই থাকবে।