দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা পুরোদমে চলছে। ফলাফল আসছে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কিন্তু নির্ধারণী ফলাফলের জন্য সবার চোখ এখন ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর দিকে। এখন পর্যন্ত যেসব রাজ্যের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় জো বাইডেন কিছুটা এগিয়ে থাকলেও দু’জনের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।
মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪২টি রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী, জো বাইডেন ২২৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে যাচ্ছেন, আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেতে যাচ্ছেন ২১৩টি ভোট। বিজয়ী হতে হলে তাদের ইলেকটোরাল কলেজের অন্তত ২৭০টি ভোট পেতে হবে। সর্বশেষ পাওয়া ফল বলছে, ফলাফল নির্ধারনী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়া, মিশিগান,আইওয়া এবং উইসকনসিনের গণনায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১টি অঙ্গরাজ্যে জয় পাবেন বলে পূর্বাভাস করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালাবামা, আরকানস, আইডাহো, ইন্ডিয়ানা, ক্যানসাস, কেন্টাকি, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি এবং মুজৌরি। এর বাইরে মি. ট্রাম্প আগের নির্বাচনে জেতা যেসব রাজ্য ধরে রাখতে পারেন: নেব্রাস্কা, নর্থ ডাকোটা, ওহাইও, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলাইনা, সাউথ ডাকোটা, টেনেসি, ইউটাহ, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এবং ওয়াইওমিং।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ক্যালিফোর্নিয়ায় জিতছেন বলে পূর্বাভাস, যেখানে রয়েছে ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসি, ভারমন্ট, ডেলাওয়্যার এবং ম্যারিল্যান্ডে তিনি বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। মি. বাইডেন আরো জিতছেন, ম্যাসাচুসেটস, নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক, কানেটিকাট, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ইলিনয়, অরেগন, ভার্জিনিয়া এবং ওয়াশিংটনে। যুক্তরাষ্ট্রের গত ১০০ বছরের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পড়েছে, যা একটি রেকর্ড।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রায় কাছাকাছি ট্রাম্প আর বাইডেন। গণনার শেষে তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু বাইডেনের। ইঙ্গিত পেয়েই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকেই আসন্ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে। তবে ৭৭ বছর বয়সী বিদেশনীতির দক্ষ জো বাইডেনের কাছে হোয়াইট হাউস নতুন কিছু নয় কিন্তু। এর আগেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মার্কিন বিদেশনীতির স্তম্ভ হিসেবে ধরা হত বাইডেনকে। কারণ সরকারের অভিমুখ তৈরি করতেন তিনিই। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপদে যে সরকারই বসুক না কেনো তাকে ঘরের থেকে বাইরেই বেশি নজর রাখতে হয়, এটাই মার্কিন প্রবাদ।


ওবামা মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাইডেনের আছে সরকারের অভ্যন্তরে আমলাতন্ত্র কে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আমলাতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরাগভাজন হয়েছেন। রিপাবলিকান নেতা হিসেবেও ধনকুবের ট্রাম্প দলেরই অভ্যন্তরে রোষের শিকার। ফলে বাইডেন যে ট্রাম্পের থেকে বহুলাংশে এগিয়ে সেটা খাতায় কলম ছাড়াও সত্য।
বিদেশনীতিতে ‘দায়িত্বজ্ঞান হীন’ অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই হোয়াইট হাউসের সব আমলা সরব। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে প্রথম দিকে ঢিলে দেওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে প্রবল সমালোচিত তিনি। পরিস্থিতি এমন যে মার্কিন শীর্ষ আমলারা একযোগে বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেনন। আর এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনর ওপরেই।
তবে জো বাইডেন তীব্র আলোচিত হন ১৯৯০ সালে প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান নেতা জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ যখন সেখানে সেনা পাঠান। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে আগ্রাসন চালায় ইরাকি সেনা। কুয়েত দখল করে ইরাক। এর পরেই শুরু হয় ইরাক বনাম মার্কিন সেনা নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলির সংঘর্ষ। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ চলে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরে ইরাক সেনা হটে যায়।
প্রেসিডেন্ট বুশের নেতৃত্বে উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিরোধিতা করেছিলেন ডেমোক্র্যাট সেনেটর জো বাইডেন। তাঁর অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন তৈরি করে। সেই বাইডেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউসের মন্ত্রণাকক্ষের প্রধান মন্ত্রণাদাতাদের একজন। বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ওবামাকে সাহায্য করেছেন বাইডেন। তাঁর কাছে হোয়াইট হাউসের অন্দরমহল নতুন করে চেনার কিছু নেই।