দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ভোটের রাতে গণনার শেষে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাত রাজ্যে ফলাফল বাকি ছিল। যেমনটি বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস করেছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই ট্রাম্পের লিড কমতে লেগেছে। উইসকনসিনে ইতিমধ্যেই হেরে গিয়েছেন তিনি। নর্থ ক্যারোলিনা ও আলাস্কা ছাড়া অন্য যে সব রাজ্যে ফলাফল ঘোষিত হয়নি, সব জায়গাতেই পিছিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব মিলিয়েই ইতিমধ্যে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট ঘোষিত হওয়া এখন নেহাতই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এত সহজে ট্রাম্প সেটা মেনে নেবেন না, এমন ইঙ্গিত মিলছে তাঁর সাম্প্রতিক ব্যবহারে।
অন্যদিকে জো বাইডেন ট্রাম্পের ঠিক বিপরীত ব্যবহার করছেন। তিনি সবাইকে ধৈর্য্য ধরার জন্য আপিল করেছেন। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন। তাঁর মতে সমস্ত ভোটই গননা করা হবে। এমনকি এর পাশাপাশি নিজের জয়ের বিষয়েও আশাবাদী তিনি। তিনি যে মার্কিন মানুষের ভালোবাসা পেয়ে গিয়েছেন এটাও উল্লেখ করেন। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি স্থলাভিষিক্ত হয়ে কিভাবে তিনি কোভিড সংক্রমণ সামলাবেন, সেটা নিয়েও তিনি চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ২৬৪ ইলেকটরাল কলেজ আসন, ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪। প্রেসিডেন্ট হওয়ার ম্যাজিক ফিগার ২৭০ ইলেকটরাল কলেজ আসন। এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের চেয়ে ৪২ লাখ বেশি ভোট পেয়েছেন বাইডেন। বাইডেন এগিয়ে নেভেডায় (৬ আসন) ২২ হাজার ভোটে, পেনসেলভ্যানিয়ায় (২০ আসন) ২৭,১৩০ ভোটে ও জর্জিয়া (১৬ আসন) ৪৩৯৫ ভোটে। এদের মধ্যে যে কোনও একটিতে ফলাফল ঘোষিত হয়ে গেলেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যাবেন বাইডেন। সেটা ভালো করে জানেন ট্রাম্পও। টুইটারে তাই তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেনকে জয় ঘোষণা না করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।
ট্রাম্প বলছেন যে ৩ নভেম্বর রাতে সব গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে তিনি এতটা এগিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর সেগুলি সব উধাও হয়ে গেল, হয়তো কোর্টে গেলে আবার সেগুলির হদিশ ফিরবে। কোর্ট যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে বলে বাইডেনকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তিনি।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ট্রাম্প যতই লাফাক না কেন, বাস্তব চিত্র যদিও অনেকটাই আলাদা। তাঁদের মতে, ট্রাম্প কোনও রকমের প্রমাণ দিতে পারেননি যে এবারের মার্কিন ভোটে কারচুপি হয়েছে। তাই আদালত তাঁর কথা শুনবে, কার্যত এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও বর্তমান মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে, মুখ্য বিচারপতি সহ নয়জনের মধ্যে ছয়জনকে ট্রাম্পের দল মনোনীত করেছে, কিন্তু তারাও রাষ্ট্রপতিরকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে এই দাবিকে পাত্তা দেবেন, এমন সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সব ভোট যাতে গোনা হয় তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলিতেতে চাপ জারি রাখছে ডোমাক্র্যাটিক দলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে ট্রাম্প সমর্থকরাও রাস্তায় নেমেছেন ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (Stop The Steal) ব্যানার নিয়ে। সবমিলিয়ে উত্তেজনা রয়েছে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে।
এর মধ্যে অনেক রাজ্যেই যারা ডাক ব্যালটে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট। সেজন্য যখন সেই ব্যালট যখন গোনা হচ্ছে, ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছেন ট্রাম্প। আর এটাকেই কারচুপি বলে অভিহিত করছেন তিনি। তবে তাঁর দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতারা কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁকে এই বিষয়ে সমর্থন করেনি। এমনকি হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনই হার মানতে রাজি নন ট্রাম্প, তিনি আদালতে যাবেনই। অন্যদিকে যেখানে খুব অল্প ব্যবধানে তিনি হারছেন, সেখানে পুনর্গণনার আবেদন করবে তাঁরা।
উল্লেখ্য, কোর্টে গিয়ে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। এর আগে ২০০০ সালে কোর্টে গিয়ে নির্বাচন জিতেছিলেন জর্জ বুশ। সেখান থেকেই ট্রাম্পের মনোবল বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এখানে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন না ট্রাম্প। আগে তাঁকে রাজ্যের আদালতে যেতে হবে। এখনও পর্যন্ত যেই সব বিষয় নিয়ে মামলা ঠুকেছে ট্রাম্প ক্যাম্পেন, সেগুলি তেমন বড় কোনও অভিযোগ নিয়ে নয়। ছোটোখাটো প্রক্রিয়াগত ভুলত্রুটি নিয়ে অভিযোগ তাদের, যাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ভোট কারচুপির অভিযোগের কোনও মিল নেই। সব মিলিয়ে কোনও ‘আশ্চর্য’ কিছু না ঘটলে হোয়াইট হাউসের মসনদ ছাড়তেই হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এটা নিশ্চিত।