দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্পুটনিক-ভি (Sputnic- V) টীকা প্রার্থী অন্তর্বর্তীকালীন তথ্যে “উচ্চ কার্যকারিতা” দেখছে , যা করোনা সংক্রমণ কে ৯২ শতাংশ প্রতিহত করতে পারছে। যদিও আগের মতই রাশিয়ার এই টিকা নিয়ে দাবি করার ‘ট্রায়ালের’ ফলাফল এখনো ‘সমকক্ষ’ পর্যালোচনা করা হয়নি। কিন্তু তাদের এই দাবি ভারতের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক ডঃ রেড্ডির ল্যাবরেটরি ইতিমধ্যে তাদের এই টিকা নিয়ে মানুষের উপর মধ্য থেকে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে।
‘স্পুটনিক-ভি’ সংক্রান্ত ঘোষণাটি এসেছে ঠিক দুই দিন পরে যখন বৃহত্তম আমেরিকান ড্রাগ কোম্পানী ফাইজার অন্তর্বর্তীকালীন তথ্য প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে জার্মান বায়োটেক ফার্ম বায়োনটেকের সাথে যৌথভাবে তৈরি করা কোভিড-১৯ টীকা করোনা’র ওপরে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর প্রভাব দেখিয়েছে।
রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) একজন মুখপাত্র বলেন, যদিও ফাইজারের অন্তর্বর্তীকালীন তথ্য ৪৩,৫০০ অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, অন্যদিকে স্পুটনিক-ভি আবিষ্কার প্রায় ১৬,০০০ অংশগ্রহণকারীর মূল্যায়ন থেকে এসেছে। রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ভারতে ডঃ রেড্ডির সাথে যৌথভাবে টিকা পরীক্ষা করছে যা সফল হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে।
আরডিআইএফ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এই নিশ্চিতকরণ রাশিয়ার বৃহত্তম ডবল ব্লাইন্ড, নির্বিচারে, প্লেসবো নিয়ন্ত্রিত ফেজ থ্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম অন্তর্বর্তী কালীন তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”
তাদের বক্তব্য “এই পরীক্ষা ১৬,০০০ এর বেশী স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে কার্যকারিতা মূল্যায়ন করেছে যারা প্রথম ইনজেকশনের ২১ দিন পর এই টিকা বা প্লেসবো পেয়েছে। করোনাভাইরাসের২০টি নিশ্চিত কেসের একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের ফলে, টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং যারা প্লেসবো পেয়েছেন তাদের মধ্যে কেস বিভক্ত করা হয়েছে যা নির্দেশ করে যে দ্বিতীয় ডোজের পর স্পুটনিক-ভি টিকার কার্যকারিতার হার ছিল ৯২ শতাংশ।”
অন্যদিকে ফাইজারের এই ‘টীকা প্রার্থীর’ তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা থেকে আশাব্যঞ্জক অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল এই সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের শেয়ার বাজারকে উত্তেজিত করেছে। যাইহোক, ভারতসহ এশিয়া এবং আফ্রিকান সেটিংসে এই টীকা চালু করার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে- কারণ এটি একটি এমআরএনএ টীকা (mRNA) যা মাইনাস -৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত অতি-ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, যা হিমায়িত ধারণ ক্ষমতা নির্মাণ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট খরচের সাথে জড়িত থাকবে।
আরডিআইএফ-এর মুখপাত্র বলেন, স্পুটনিক ভি উপরিউক্ত বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। “স্পুটনিক ভি টীকার দুটি ধরণ রয়েছে – একটি তরল, যা -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং লিয়োফিলিসড (হিমায়িত শুকনো) সংরক্ষণ করতে হবে, যা ২° সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকেবলেন, বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় টিকা পরিবহনের জন্য এই লিওফিলইজকরা ফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যেহেতু রাশিয়া একটি অত্যন্ত বড় দেশ।
“ভারতও একটি অত্যন্ত বড় দেশ… এই টিকা তৈরি করা হয়েছে বিশাল দূরত্বের কথা বিবেচনা করে যে প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছানোর জন্য তাকে ভ্রমণ করতে হবে। স্পুটনিক ভি একটি মানব অ্যাডেনোভাইরাস টীকা যা দুটি দুর্বল এবং জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত সাধারণ ঠাণ্ডা ভাইরাস ব্যবহার করে কোভিড-১৯ স্পাইক প্রোটিন (SARS-COV-2 ভাইরাসের স্পাইকি আউটার লেয়ার) তৈরি করতে মানব শরীরের কোষের জন্য কোড বহন করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই স্পাইক প্রোটিনকে হুমকি হিসেবে চিনতে পারে এবং এটি আক্রমণ করার জন্য একটি ইমিউন রেসপন্স তৈরি করে, যাতে আসল কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রমণ করার চেষ্টা করলে কোন ক্ষতি করতে না পারে।
ভারতে ডঃ রেড্ডি অন্তত ১০টি অঞ্চল জুড়ে ২/৩ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রায় ১,৫০০ জন অংশগ্রহণকারীর উপর এই টিকা প্রার্থীকে পরীক্ষা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২৮ শে অক্টোবর তারিখে কোম্পানিটি নিশ্চিত করেছিল যে ‘ট্রায়ালের’ জন্য তালিকাভুক্তি কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে।
যদিও একটি সূত্র মারফত খবর এই টিকা’র ট্রায়াল এখনো শুরু হয়নি। যদিও ভারতে শুরু হতে চলা এই ট্রায়াল সম্পর্কে ডঃ রেড্ডির কাছে পাঠানো প্রশ্নের এখনো কোন উত্তর পাওয়া যায়নি
।