দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি দৌড়ে এখন প্রথম স্থানে আছে মডার্না, এর পরে ফাইজার আর তারপরে একে একে অক্সফোর্ড আর ভারতের ভারত বায়োটেক। তবে রাশিয়ার মতনই কোনও তথ্য প্রকাশ্যে না এনে ভ্যাকসিনের যথেচ্ছ পরীক্ষা করে এখন চীন জানাচ্ছে ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে। চিনের সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন ‘করোনাভ্যাক’ নিরাপদ ও মানব শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম এমনটি দাবি গবেষকদের। আর গবেষকদের এই দাবি যে রিপোর্ট কে কেন্দ্র করে তা ছাপা হয়েছে বিখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে।
গবেষকদের দাবি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক পর্বে ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল এই টিকা। আর এই পরীক্ষা থেকেই এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে । দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৪ দিন অন্তর ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই গবেষণা রিপোর্টে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও উত্পাদন ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে অ্যান্টিবডি গঠনে সর্বোচ্চ ডোজও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে চীনের জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক ফেংকাই ঝু বলেছেন, করোনাভ্যাক টিকা প্রদানের ২৮ দিনের মধ্যে দ্রুত অ্যান্টিবডি গঠনে সক্ষম বলে দেখা গিয়েছে। এই রিপোর্ট সামনে আসতেই এই ভ্যাকসিন সারা বিশ্বজুড়ে চলা মহামারীর সময় জরুরীকালীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলেই তাঁরা নিশ্চত।
ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৪৮ করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এরমধ্যে একটি হল করোনাভ্যাক। এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যে স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর করা হয়েছে, তাঁদের করোনা আক্রান্ত হওয়া কোনও ইতিহাস নেই। প্রথম পর্বে ১৬ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১৪৪ স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর তা প্রয়োগ করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের দুটি ভাগে ভাগ করে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম পর্বের পরীক্ষায় ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া কম ও উচ্চ ডোজের রোগীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের ছিল- তা হল ইঞ্জেকশনের জায়গায় যন্ত্রণা।
প্রথম পর্বের অংশগ্রহণকারীদের সাতদিনের পর্যবেক্ষণ পর্ব শেষ হলে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা শুরু হয়। ৩ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত প্রায় ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী ওই পরীক্ষায় যোগ দেন। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীদের দুটি ভাগে ভাগ করে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের মাঝে গবেষকরা উত্পাদন ক্ষমতা বাড়াতে উত্পাদন প্রক্রিয়াতে বদল করেন। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সাড়া আরও ভালো পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। তবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে ব্রাজিলে সামগ্রিক বিক্ষোভ তৈরি হওয়াতে তা মাঝপথেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ব্রাজিলিয়ানদের দাবি সরকার যথেচ্ছভাবে গিনিপীগের মত মানুষের শরীরকে ব্যবহার করছে। গুজবও রটেছিল যে ওই ভ্যাকসিন নিয়ে এক ডাক্তার মারা গিয়েছেন।
এই মূহুর্তে সারা বিশ্বের ফারমা কোম্পানী গুলি নিজেদের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগীয়তায় আছে। আর এর পেছনে রাষ্ট্রশক্তি গুলিরও বিশ্ববাজার দখলের একটি অলিখিত লড়াই চলছে বলেও মনে করছে বিশিষ্ট মহল। আর সেজন্যেই রোজ রোজ নতুন দাবি উত্থাপিত হচ্ছে।