দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে শেষ এক বছরের ওপরে সারা বিশ্বজুড়েই ত্রাহি ত্রাহি রব। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের। আমাদের দেশেও এই মূহুর্তে ১.৪ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত প্রায় ১০ লক্ষের কাছাকাছি, যার মধ্যে ৯ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা শোনালেন আর এক শঙ্কার কথা!
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সীমান্ত অঞ্চলের জঙ্গলে থাকা বাদুড়দের শরীরে পাওয়া গিয়েছে অন্যান্য প্রজাতির বিভিন্ন করোনাভাইরাস, যা সেইসব বাদুড় থেকে মানবশরীরে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সম্প্রতি এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন চীনের উহানের এক বিজ্ঞানী। আর খুব তাত্পর্যপূর্ণ এই ঘোষণা কারণ নভেল করোনা ভাইরাসের মহামারী এই চীনের উহান থেকেই প্রথম ছড়িয়ে পড়েছিল!
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বাদুড়ের দেহে বাসা বাঁধা (Sars-CoV-2) ভাইরাসের জ্ঞাতিরা ইতিমধ্যে চীনের সীমান্ত অতিক্রম করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির বিজ্ঞানী শি ঝেংলি। ফলে শুধু চীন নয় চীন সংলগ্ন একাধিক দেশে বিশেষ করে ভারত, নেপাল, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামেও ওই ভাইরাসগুলি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর মানুষের সুরক্ষার জন্যেই সেগুলো খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী ঝেংলি।
প্রসঙ্গত, এই উহান নির্ভর বিজ্ঞানী সম্প্রতি একটি ফরাসি মেডিক্যাল ও পশু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে এই সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে কোভিড অতিমারী ছড়িয়ে পড়ার পরে তার উৎস সন্ধানে কাজে নামা দুটি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল টিম এই বিশেষ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকরে। গবেষকদের মতে এই ধরণের কাজ যদিও রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে থাকে, তবুও তাঁরা হাল ছাড়তে নারাজ।
আরও পড়ুন: জানলে অবাক হবেন, বৈশ্বিক মহামারির নেপথ্যে মাত্র ‘এক চা চামচ’ পরিমাণ করোনা ভাইরাস!
যদিও অতিমারীর শুরু থেকেই আমেরিকা ও চীন পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে। আর এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধও শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। ইতিমধ্যে গত সপ্তাহেই ভারত-সহ আরও কয়েকটি দেশেও এই মহামারীর উৎস থাকতে পারে বলে দাবি করেছে একটি চীনা গবেষণা সংস্থ। এমনকি গত ডিসেম্বর থেকেই শি ঝেংলির বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারকেই নভেল করোনাভাইরাসের আতুরঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, অসাবধানতাবশত: সেই ল্যাব থেকেই প্রথম ছড়িয়ে পড়ে এই মারাত্মক জীবাণু।
যদিও এই তত্ত্ব অস্বীকার করেছেন শি স্বয়ং। তবে চীনের বাদুড়ই যে এই ভাইরাসের উৎপতত্তি ও মাধ্যম সে বিষয়টি তিনি একেবারে উড়িয়ে দেননি। ওই বিজ্ঞানীর মতে, করোনাভাইরাসের সঠিক উৎস খুঁজতে গেলে চীনের বাইরেও খোঁজ করতে হবে। যদিও এই বিষয়টিকে অনেকেই বেজিং এর চাপে বলা বিবৃতি বলেই মনে করছেন।
বিজ্ঞানী শি এর দাবি, করোনাভাইরাস মূলত বাদুড়বাহিত জীবাণু। তবে ধারণা করা হয় যে মানবশরীরে ঢোকার আগে বাদুড়ের থেকে অন্য কোনও পশুর শরীরে আশ্রয় নিয়েছিল করোনাভাইরাস। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে প্যাঙ্গোলিনের নাম উঠলেও তার জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পশু পাচারকারী ও যথেচ্ছ বন্যপ্রাণী খাওয়া থেকেই চীন থেকে সংক্রমিত বন্য পশু ভারত-সহ অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে।