দ্য কলকাতা মিরর ব্যুরো ইস্রায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের একটি সরকারী বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ইস্রায়েলি-অধিকৃত সিরিয়ান গোলান হাইটসের অংশ, মাউন্ট ডভ এলাকায় চারটি হিজবুল্লাহ জঙ্গি বীনা অনুমতিতে সীমান্ত পেরিয়েছিল।
জঙ্গিদের দেখামাত্রই ইস্রায়েলের সামরিক বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন- যারা “আমাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছিল, তাদের সেনা বাহিনী গুলি করে তাড়িয়েছে।
অন্যদিকে হিজবুল্লাহর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তারা কোনো ধরণের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি বরং এই গুলি চালনার বিষয়ে তারা ইস্রায়েল কে ‘ভীতু’ শত্রুর সাথে তুলনা করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এক হিজবুল্লাহ যোদ্ধার মৃত্যুর পর এই অঞ্চল কয়েকদিন ধরেই বেশ উত্তাল ছিল। কথিত সেই যোদ্ধা সিরিয়াতে সংঘটিত বিমান হামলায় মারা গিয়েছিলেন। যদিও এই বিষয়ে ইস্রায়েল কোনো কিছু নিশ্চিত করেনি আবার এড়িয়েও যায় নি। এই বিমান হামলা গত সোমবার ভোরের দিকে সংঘটিত হয়েছে। এই বিষয়ে ইস্রায়েল হিজবুল্লাহ জঙ্গিদের প্রতিশোধ না নেওয়ার জন্যেও সতর্ক করেছিল।
তাহলে এই ঘটনা কী ইস্রায়েল ও হিজবুল্লাহ কে এক সর্বাত্মক যুদ্ধের পথে নিয়ে চলেছে? এই প্রসঙ্গে আইডিএফ জানিয়েছে যে সোমবার গুলিবিদ্ধ হয়ে “সন্ত্রাসীরা লেবাননে পালিয়ে যায়” এবং মিঃ নেতানিয়াহু টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন যে “আমাদের সরকার এই অনুপ্রবেশের প্রতি গুরুতর দৃষ্টিভঙ্গি” নিয়েছে।
এই বিবৃতিতে তিনি আরও যোগ করেছেন যে : ” লেবাননের অঞ্চল থেকে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই ঘটনার জন্যে তিনি হিজবুল্লাহ এবং লেবানন কে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ করেছেন। তিনি এও বলেছেন যে হিজবুল্লাহকে বোঝা উচিত যে এই ধরনের ঘটনা আসলে হাতে আগুন নিয়ে খেলার সমান।
ইস্রায়েলি গণমাধ্যম, নামবিহীন এক সামরিক সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে হিজবুল্লাহর একটি সেল একটি আইডিএফ পোস্টে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ইস্রায়েল তাদের তল্লাশি করছিল এবং জঙ্গিরা যখন তথাকথিত নীল রেখাটি (ইস্রায়েল এবং লেবাননের মধ্যবর্তী জাতিসংঘের স্বীকৃত সীমানা) পেরিয়েছিল তখনই তারা গুলি চালায়।
খবরে বলা হয়েছে যে ইস্রায়েলি সেনাবাহিনী তাদের দিকে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করেছে। যদিও লেবাননের পক্ষে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
লেবাননের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি লেবাননের সর্বাধিক শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী হল এই হিজবুল্লাহ। যারা ইস্রায়েলের চির শত্রু ইরান দ্বারা বহুল পরিমাণে সশস্ত্র ও অর্থায়নে পরিচালিত। এরা প্রধানত লেবাননের দক্ষিণ দিকটি পরিচালনা করে এবং এর পাশাপাশি রাজনৈতিক সহযোগীতার মাধ্যমে সরকার সমর্থিত একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে পরিচিত।
হিজবুল্লাহ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এর যোদ্ধারা সোমবার কোনও সংঘর্ষ, গুলি চালানো বা অনুপ্রবেশের সাথে জড়িত ছিল না, জানিয়েছে যে “এটি কেবল একটি দল, ছিল যারা ভীতু, উদ্বেগযুক্ত ও উত্তেজিত ইস্রায়েলি শত্রু”। তবে এই বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়েছে যে ওই যোদ্ধার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া “অবশ্যই আসছে”।
ইস্রায়েল এবং হিজবুল্লাহ হ’ল দুই মহা শত্রু যারা ২০০৬ সালে এক মাস ব্যাপী যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং সেই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ৮ জন ইস্রায়েলীয় সৈন্যকে হত্যা ও আন্তঃসীমান্ত অভিযান চালানোর সময়ে আরও দু’জনকে অপহরণ করেছিল।
এই ঘটনার পরবর্তী সংঘর্ষের ফলে লেবাননে প্রায় ১,১৯১ জন মানুষ মারা যান যাদের মধ্যে বেশিরভাগ বেসামরিক মানুষ এবং এই যুদ্ধে ইস্রায়েলে ১২১ জন সেনা এবং ৪৪ জন বেসামরিক মানুষকে নিহত হয়েছিলেন।
যুদ্ধের সেই অন্যতম মহীপাত সীমান্ত অঞ্চলে এখনো সেই ক্ষতর দাগ বেশ জ্বলজ্বলে।
যদিও ইস্রায়েলি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কয়েক মিটার অতিক্রম করার সময় এই লেবানীয় জঙ্গিরা ঠিক কী ভাবছিল তা স্পষ্ট নয়। ইস্রায়েলের মতে তারা সামরিক রাইফেল নিয়ে সজ্জিত ছিল এবং নিশ্চই আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল।
যদিও এই ঘটনা নিয়ে লেবাননে এখনও বেশ কিছু পরস্পর বিরোধী প্রতিবেদন রয়েছে। এবং এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহের একজন যোদ্ধার মৃত্যুর জন্য এটি সত্যিই কোনো প্রতিশোধ প্ল্যান ছিল কিনা।
বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা উভয় পক্ষের মধ্যে এই তিক্ত শত্রুতা অব্যাহত থাকবে। আসলে ইস্রায়েল, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর উচ্চ প্রযুক্তির রকেট ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্পটির সন্ধান করতে চাইছে, অন্যদিকে এই লেবানীয় গোষ্ঠী ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করে হিজবুল্লাহ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায় করতে চাইছে।