দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের য়ুহান প্রদেশে প্রথম চিহ্নিত করোনা ভাইরাসের অতিমারীর কারণে নাজেহাল প্রায় গোটা বিশ্ব। বিগত ৪ মাস ধরেই বিপর্যস্ত সমগ্র পৃথিবীর জনজীবন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। দেশে দেশে মৃত্যুর গ্রাফ উর্ধমুখী। এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে করোনার টিকা আবিষ্কারের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে সবাই।
তবে এমত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়া দাবি করেছে যে এই আবিস্কারের দৌড়ে তারা সবার আগে। তবে শুধু এখানেই থেমে নেই তারা। আগামী দু-সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে করোনার টিকা বাজারে নিয়ে আসবে বলে ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
সম্প্রতি রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার মিলিটারি ও সরকারি গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি ভ্যাকসিন বর্তমানে দ্বিতীয় দফার ক্লিনিকাল হিউম্যান ট্রায়ালে রয়েছে।
ইতিমধ্যে যা জানা যাচ্ছে তাতে ১০ই আগস্ট বা তার আগেই রাশিয়ার গ্যামেলিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন বাজারে ব্যবহার করার অনুমোদন পাওয়া যাবে।
তবে এই ভ্যাকসিন বাজারজাত করার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে গেলে সবার আগে করোনার ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
রাশিয়ার অর্থ দফতরের প্রধান কিরিল দিমিত্রিভ এই ঘটনাকে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা বিশ্বের প্রথন স্যাটেলাইট লঞ্চের সঙ্গে তুলনা করেছেন কারণ সেই ঘটনার মতই বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও বাজারজাত করার কাজটা করে ফেলছে রাশিয়া।
রাশিয়ার সরকারী অর্থ দফতরই ভ্যাকসিন গবেষণায় সমস্ত অর্থ সরবরাহ করেছে। যদিও সন্দেহ রয়ে গিয়েছে এক যায়গায়, কারণ রাশিয়া এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা তথ্য সরকারী বা বেসরকারীভাবে প্রকাশ করেনি। তবে সূত্রের খবর যেকোনো ভাবেই ৩ অগাস্টের পরে যে কোনও সময় ভ্যাকসনটি রাশিয়াতে লঞ্চ করা হতে পারে।
এই ঘটনা ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা বিশ্বের প্রথন স্যাটেলাইট লঞ্চের সঙ্গে তুলনীয়
-কিরিল দিমিত্রিভ, প্রধান, অর্থ দপ্তর রাশিয়া।
এদিকে গোটা বিশ্বে করোনায় ফের বাড়ল সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮১৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৯১১।


অন্যদিকে এই ইউরোপেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল ভারতেও হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। সেইমতো দেশের পাঁচটি জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ জায়গায় স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হবে করোনার ভ্যাকসিন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে বাছাই করা হয়েছে। এই সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা। সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়াও ইউরোপের অ্যাস্ট্রাজেনেকা নামে আরও একটি সংস্থাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অক্সফোর্ডের তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার আশাব্যঞ্জক ফলাফল এই মাসের গোড়াতেই প্রকাশিত হয়।
ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে এই অক্সফোর্ডের করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। ভারতেও এই ভ্যাকসিনের মানবশরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ভারতের মুম্বই ও পুনেতে প্রায় ৪০০০ জনের শরীরে করোনার এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হবে। উল্লেখ্য ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাকসিন’ ও প্রথম হিউম্যান ট্রায়ালে আশাপ্রদ ফলাফল দিয়েছে। তাই মরমারী পীড়িত জনগণের একটাই আশা যেমন করেই হোক দূরে চলে যাক এই মারণ ভাইরাস।