দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: নিজেদের ‘বৃহত্ হওয়ার শক্তি’ কে ভুল পথে পরিচালিত করে ক্ষুদ্র প্রতিযোগীদের কে বলপূর্বক কক্ষচ্যুত করছেন গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন আর অ্যাপল। হ্যাঁ, এমনই অভিযোগের আঙুল তুলেছে ওয়াশিংটন আইন পরিষদ। এই বিষয়ে নিজেদের সপক্ষে মত প্রকাশের জন্যে বুধবার বিকেলে এই কোম্পানীগুলির সিইও দের হাজিরা দিতে হয়েছিল ওয়াশিংটনের আইন পরিষদ কমটির সামনে। কোভিড-১৯ জনিত কারণে শারিরীকভাবে উপস্থিত থাকতে না পেরেও ভার্চুয়াল মিটিং এ সাক্ষ্য দিলেন সুন্দর পিচাই, মার্ক জুকেরবার্গ, টিম কুক ও জেফ বেজস।


এই প্রসঙ্গে আমাজনের মালিক জেফ বেজস বলেছেন- “এই বিশ্ব ‘বৃহত্ কোম্পানী’ প্রত্যাশা করে। অন্যদিকে ফেসবুক, অ্যাপল আর গুগলের যুক্তি তাদের সংস্থা উদ্ভাবনী ক্ষমতা রাখে এবং উদ্ভাবনকেই প্রশ্রয় দেয়।
এই তথাকথিত বৃহত্ প্রযুক্তি-কোম্পানী গুলির এই হাজিরার কারণ ওয়াশিংটনে আইন প্রণেতারা আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণকে বিবেচনা করছেন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এ চলা অসাধু প্রতিযোগিতার তদন্ত চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন ‘Google’ এর গুপ্তচরবৃত্তি’র পর্দাফাস
কিছু বিশ্লেষক চান যে এই সংস্থাগুলি ভেঙে যাক। এদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটরা টেক টাইটানদের চাপ দিয়েছিলেন, অন্যদিকে কীভাবে তারা তথ্য পরিচালনা করেন এবং তারা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রান্তিককরণ করছেন কিনা তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন রিপাবলিকানরা ।
এই প্রসঙ্গে গণতন্ত্রের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কমিটির সদস্য ডেভিড সিসিলিন বলেছেন, “আইনজীবিদের দ্বারা চালিয়ে যাওয়া এক বছরের দীর্ঘ তদন্তে দেখা গিয়েছে যে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি “প্রসারণের জন্য ধ্বংসাত্মক এবং ক্ষতিকারক উপায়ে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল”। তিনি আরও বলেন যে তিনি নিশ্চিত যে এই কোম্পানী গুলি একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্যে যে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে।


পাঁচ ঘন্টার একটি দীর্ঘ সাক্ষ্য শেষে তিনি বলেন-“এদের মধ্যে কিছু কোম্পানীর ভেঙে যাওয়া উচিত এবং সেই সাথে এদের কঠোর নিয়ন্ত্রণ বিধির পালন করা উচিত”।
ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, গুগলের সুন্দর পিচাই এবং অ্যাপলের টিম কুক জোর দিয়েছিলেন যে তারা কোনও অবৈধ কাজ করেনি এবং তাদের প্রতিষ্ঠান আমেরিকান সভ্যতা ও মূল্যবোধের উপর জোর দিয়েছে।
শুনানিতে, আইন প্রণেতারা গুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন যে গুগল তাদের নিজস্ব ওয়েব পৃষ্ঠায় ব্যবহারকারীদের ধরে রাখার জন্য, ইয়েলপের (Yelp) এর মতো ছোট সংস্থাগুলির তৈরি সামগ্রী চুরি করেছে।


এর পাশাপাশি অ্যামাজনের তার সাইটে বিক্রেতাদের সাথে তাদের ব্যবহার, ফেসবুকের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের অধিরোহণ যেমন ‘ইনস্টাগ্রাম’ এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরটিও আইন পরিষদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
গুগলের প্রতি এই চুরি করার অভিযোগের বিপক্ষে সিইও সুন্দর পিচাই জানান, তাঁর কোম্পানী ‘সর্বোচ্চ মান’ এ রয়েছে।
মিঃ সিসিলিন আরও বলেছেন যে, অ্যামাজনের আগ্রহের মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব ছিল, কারণ এটি বিক্রেতাকে গ্রহণ করে এবং ঠিক সেই অনুরূপ পণ্য সরবরাহ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ জাতীয় অনুশীলন ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদেরও তদন্তের আওতায় এসেছে।
তিনি এউ বলেছিলেন- “অ্যামাজনের এই দ্বৈত ভূমিকা … মূলত প্রতিযোগিতা বিরোধী এবং কংগ্রেসকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে”।
তবে, কিছু রিপাবলিকান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তারা সংস্থাগুলি বিভক্ত করতে বা মার্কিন প্রতিযোগিতা আইন উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্বিবেচনা করতে প্রস্তুত নন, এক কমিটির সদস্য বলেছিলেন যে “বৃহত্ হওয়া সহজাত ভাবে খারাপ কিছু নয়”।


বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি সংস্থার চারজন নির্বাহী হয়তো দূর থেকে জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, কিন্তু বুধবার বিকেলে তারা একটি রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে ধরা পড়েছিলেন।
এই শুনানির মূল উদ্দেশ্য হ’ল বিদ্যমান বিশ্বাস-বিরোধী আইনগুলি ‘ট্রান্সন্যাশনাল টেক গলিয়াথগুলির’ ওপর পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ জারি করে কিনা তা সম্বোধন করা। তবে বাস্তবে কমিটির প্রতিটি সদস্যের কথা বলার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল কারণ কর্পোরেট প্রধানরা প্রতিটি দিক থেকে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
ভিডিও সাক্ষাতকারে উপস্থিত হয়ে, নির্বাহকরা তাদের সংস্থাগুলির পক্ষ নিয়ে বলেছেন যে তাদের সব পণ্যগুলি ছোট ব্যবসাগুলিকে সহায়তা করেছে এবং তারা সর্বদা নতুন আগতদের কাছ থেকে প্রতিযোগিতার ঝুঁকির মধ্যে থেকেছে।
ডেমোক্র্যাটস এবং রিপাবলিকান উভয় পক্ষই কীভাবে সংস্থাগুলি তাদের প্ল্যাটফর্মে বক্তৃতা এবং অভিব্যক্তি পরিচালনা করেছিল তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ডেমোক্র্যাটস এর দাবি তারা ঘৃণ্য বক্তব্য এবং মিথ্যা তথ্য অপসারণের পক্ষে খুব বেশি এগিয়ে যায়নি। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা পাল্টা মন্তব্য করেছিল যে তারা সেন্সরশিপের জন্যে রক্ষণশীলদের ‘একচেটিয়া’ ঘোষণা করেছিল।
এই প্রসঙ্গে ওয়েডবুশ সিকিওরিটির টেক বিশ্লেষক ড্যান আইভেস বলেছেন, ওয়াশিংটনে একটি “ঝড়ের মেঘ” তৈরি হচ্ছে তবে তিনি মনে করেছিলেন যে সেখানে কংগ্রেস কিছু নতুন আইন নিয়ে একত্রিত হবে যা প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে। তবে বাস্তবে তা এখনো হয় নি।
তবে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট এই দুই রাজনৈতিক আইনপরিষদীয় কমিটির যাতাকলের মধ্যে পেষাই হতে থাকা এই চার বৃহত্ কোম্পানী আগামী তে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার।