দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: বিশ্বস্ত সুত্র মারফত্ পাওয়া খবর অনুযায়ী নেপাল সরকার আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তাদের সংশোধিত ও বিতর্কিত মানচিত্র ভারত, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলিকে পাঠাবে। উল্লেখ্য এই সংশোধিত মানচিত্রে ভারতীয় মানচিত্রে থাকা কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরা অঞ্চলগুলি রয়েছে যা সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করেছে।
নেপালের ভূমি ব্যবস্থাপনা, সমবায় ও দারিদ্র্য বিমোচনের মন্ত্রী পদ্মা আরিয়াল এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান – “আমরা কালাপানি, লিপুলেখ, এবং লিম্পিয়াধুরা সহ আপডেট হওয়া আমাদের দেশের মানচিত্রটি ভারত সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করব। এই প্রক্রিয়াটি এই মাসের মাঝামাঝি মধ্যে শেষ হবে ” ।
নেপালের রাষ্ট্রীয় পরিমাপ মন্ত্রণালয়ের অধিদফতর এই মানচিত্রের আপডেট সংস্করণটির ৪,০০০ অনুলিপি ইংরেজিতে মুদ্রণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করতে বলেছে। আপডেট হওয়া মানচিত্রের কমপক্ষে ২৫,০০০ অনুলিপি দেশ জুড়ে বিতরণ করা হয়েছে। নেপালের মানচিত্রটি তার প্রতীকের একটি অংশ এবং সেই দেশ কর্তৃক সরকারী সমস্ত অফিসিয়াল এমব্লেমে ব্যবহৃত হয়, ঠিক যেমন ভারত সরকারের চিঠিপত্রগুলিতে অশোক স্তম্ভ রয়েছে।
তবে, নেপালের ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মধ্যে একটি পরিবর্তণ লক্ষণীয়। এই দলের নির্বাহী চেয়ারপারসন পুষ্প কামাল দহল “প্রচণ্ড”র নেতৃত্বে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সাম্প্রতিক ভারতবিরোধী মন্তব্য “রাজনৈতিকভাবে সঠিক বা কূটনৈতিকভাবে উপযুক্ত নয়।”


গত জুনে, নেপালের সংসদ একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করেছে যাতে দেশের নতুন মানচিত্রে ভারতের কিছু অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারত এই পদক্ষেপকে অযোগ্য বলে অভিহিত করে এবং বলেছে যে এটি “ঐতিহাসিক তথ্য বা প্রমাণের” ভিত্তিতে তৈরি নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন- “নেপালের এই দাবি ও কৃত্রিম সম্প্রসারণ ঐতিহাসিক ঘটনা বা প্রমাণের ভিত্তিতে নয় এবং ব্যবহারযোগ্য নয়। এমনকি সীমানা ইস্যুতে আলোচনা করাও আমাদের বর্তমান বোঝাপড়ার লঙ্ঘন। ”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত ৮’ই মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং উত্তরাখণ্ডের ধরচুলার সাথে লিপুলেখ সংযোগকারী একটি ৮০ কিলোমিটার রাস্তাটির উদ্বোধনের পরই ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের কাছে এই রাস্তা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারত লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা সীমানা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই অঞ্চলটিকে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ হিসেবেই মানচিত্রে দেখানো রয়েছে। মূলত: এই অংশ নিয়েই নেপাল ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। নেপাল ঐ রাস্তাটি উদ্বোধনের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দাবি করেছিল যে এটি তাদের অঞ্চল দিয়ে গিয়েছে, যদিও ভারত দাবিটি পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সুত্র অনুযায়ী প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে নেপালের এই নতুন ম্যাপকে সরকারি কাজে ব্যবহার করবে না রাষ্ট্রসংঘ।
নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রসংঘ যখন কোনও দেশের ম্যাপ ছাপে সেখানে একটি সতর্কীকরণ দেওয়া থাকে। সেখানে বলা হয়, দেশের সীমানা ও অঞ্চল ম্যাপে দেখানোর অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রসংঘ সরকারিভাবে একে মান্যতা দেয়। প্রসঙ্গত, এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলি কূটনৈতিক প্রয়োজনে আলোচনা সাপেক্ষে কাজ চালানোর জন্যে মেনে নেয় রাষ্ট্র সংঘ।