দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে সকলকে পেছনে ফেলে বিজয় ঘোষণা রাশিয়ার। আজ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছেন যে মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনটিকে সরকারী অনুমোদন দিচ্ছে রাশিয়া।
সরকারী কর্মকর্তারা এই মাসের শুরুতেই পরীক্ষামূলকভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করার জন্যে সেনা, ডাক্তার এবং ফ্রন্ট লাইনে লড়াই করা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী সহ লক্ষ লক্ষ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে পুতিনের মেয়ের ওপরে আজ এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।
রাশিয়ান কর্মকর্তারা বলেছেন যে সাইবেরিয়ার রাজ্য গবেষণা কেন্দ্র, ভেক্টরের দ্বিতীয় টিকাটিও খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
যদিও এত দ্রুত এবং স্বল্প স্থান বিস্তৃত পরীক্ষার মাপ কাঠিতে একটি ভ্যাকসিন কে বাজারজাত করার পেছনে বিশেষজ্ঞরা ইগো’র লড়াই ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। অনেকের মতে রাশিয়ার এই বিজয় ঘোষণা ওই দেশের আগ্রাসী মনোভাবের পরিচায়ক।
বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা সমালোচনা করেছেন। তাঁরা সন্দিহান এই ভেবে যে এই ভ্যাকসিনের শট ক্ষতিকারকও হতে পারে বা তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষকে সুরক্ষার ভ্রান্ত ধারণা প্রদান করতে পারে। ইতিমধ্যে চীনও যথার্থ পরীক্ষা দ্বারা সুরক্ষিত এবং কার্যকর সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পূর্বেই তার সামরিক ক্ষেত্রে একটি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
এই মাসে একটি কংগ্রেসনাল শুনানিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফৌসি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, দেশগুলি যদি বিস্তৃত পরীক্ষার আগে একটি ভ্যাকসিন সরবরাহ করে তবে সমস্যা হবে।
ফৌসি বলেছেন -“আমি আশা করি যে চীনা ও রাশিয়ানরা কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে প্রকৃতপক্ষে এই ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করে দেখছে, কারণ আপনার পরীক্ষা করার আগে বিতরণ করার জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরির দাবি করা, আমার মনে হয়, এটি সমস্যা সমাধানের সেরা পথ নয়।”
রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় 50 জন সদস্য এবং মুষ্টিমেয় অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে পরীক্ষা করেই রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কে খুব সহজে মেনে নিতে পারছে না বাকি বিশ্ব।
যদিও রাশিয়ার দাবি এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এখনও বেশ কিছু পরীক্ষা চলছে। শুধুমাত্র , রাশিয়ায় ইচ্ছুক ফ্রন্ট লাইনের চিকিত্সা কর্মী ও শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করবে, যাদের এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অনুভূতি কেমন তা নথিভুক্ত করতে বলা হবে।
উল্লেখ্য গত সপ্তাহেই দিমিত্রিভ বলেছিলেন, “আমরা আগস্টে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ এই জাতীয় টিকা প্রয়োগ করব।”
যদিও ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গামালিয়ার ভ্যাকসিনটিকে প্রথম পর্বের তালিকাভুক্ত করেছে। রাশিয়ার ভ্যাকসিনের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাব্লুএইচওর মুখপাত্র খ্রিস্টান লিন্ডমায়ার গত সপ্তাহে জেনেভাতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে কোনও টিকা “রোলআউটের লাইসেন্স পাওয়ার আগে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা ও নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়।”
তিনি আরও যোগ করেন যে ” সম্ভবত একটি টিকা সমস্ত ধাপটি পেরিয়ে কার্যকর হয়ে কাজ করে এবং যা একটি আবিষ্কার বা খুঁজে পাওয়া এবং সফল প্রয়োগের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য গড়ে তোলে।”
উল্লেখ্য, রাশিয়ার পর পরই এই লিস্টে রয়েছে আজানেক্সা ও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন, মোডার্মা, নোভাভ্যাক্স আর ভারতের কোভ্যাক্সিন। এদের প্রত্যেকটি ই তৃতীয় ট্রায়ালে আছে। এই মহুর্তে রাশিয়ার ভ্যাকসিন যদি সত্যি ই সফল হয় তবে তা মানব ইতিহাসে আশীর্বাদ তুল্য মূল্যবান হবে ।