দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গত সপ্তাহের খবর যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভ্যালে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের প্রেস সেক্রেটারি দুজনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন যা হোয়াইট হাউজের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। যদিও কর্মকর্তারা বলেছেন যে উভয় নেতাই পরবর্তীতে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন তবে এই ঘটনাটি একটি উদ্বেগজনক সম্ভাবনা রচনা করেছে: যদি ট্রাম্প বা পেন্স করোনা আক্রান্ত হন- অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু হয় বা যদি উভয়েই একই সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন? তাহলে আমেরিকার কী হবে?
এর ফলাফল সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দাবির সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক সংকট পর্যন্ত যে কোন কিছুই হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোন পরিস্থিতিতে কমান্ডার-ইন-চিফের পরিচয় পরিষ্কার। কারণ উপরাষ্ট্রপতির কাছে সাময়িক ক্ষমতা হস্তান্তরের নজির আছে- কিন্তু তাতে সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনাও আছে। অন্তত যে কোনো একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বর্তমান এবং হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং হোয়াইট হাউসের বাইরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন-সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ফলাফলের মাত্রা ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে অসুস্থতার তীব্রতার উপর, এবং বিশেষ করে ট্রাম্প নিজে অক্ষম হয়েছেন কিনা তার ওপর।
বারাক ওবামার সময়ের প্রাক্তন সিনিয়র হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা ডেভিড এক্সেলরড বলেছেন, “সবকিছুর জন্য একটি প্রোটোকল আছে। “সন্ত্রাসী বা পারমাণবিক হামলার ক্ষেত্রে কি করতে হবে তার জন্য আমরা নিয়মিত অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতাম, কিন্তু আমি সত্যিই কখনো আশা করিনি যে হোয়াইট হাউস এখন যে মহামারী পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা থাকলে কী করতে হবে।”
ইউরোসিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেছেন, প্রেসিডেন্টের রোগ নির্ণয়ের সংবাদে শেয়ার বাজার প্রায় পড়ে যাবে। কিন্তু তিনি আশা করেন ব্যবসায়ীরা সম্প্রতিক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আরোগ্য থেকে শিক্ষা নেবেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে জনসন পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাবকে দায়িত্ব পালন করার জন্য ডেপুটেশন দিলেও ৭ এপ্রিল তিনি যখন আইসলেশনে প্রবেশ করেন, তখনও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি; ইতিমধ্যে জনসন এখন কাজে ফিরে এসেছেন এবং তাঁর সম্পূর্ণ দায়িত্ব পুনরায় পালন করছেন।
ব্রেমার আরও বলেন যে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী মতে ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং তারপর নিজেকে সক্ষম ঘোষণা করার সাথে সাথে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ এর কথা জানান। বুশ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দু’বার এই কাজ করেন, যখন তিনি চিকিৎসার জন্যে অব্যাহতি নেন এবং আর এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান একবার কোলন সার্জারির জন্য এই ২৫’তম সংশোধনী ব্যবহার করেছিলেন।
তিনি এই সাথে যোগ করেন যে যদি ট্রাম্প হঠাৎ করে আক্রান্ত হন অথবা ইনটিউবেশনের জন্য তাঁকে ঘুমের মধ্যে থাকতে হয়, তাহলে ২৫তম সংশোধনীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভাকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হস্তান্তর কার্যকর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ভয়াবহ এবং পরিসংখ্যানগতভাবে অসম্ভব যে বিষয়টি তার জন্যেও একটি রোড ম্যাপ আছে। কিন্তু যদি প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট উভয়ই মারা যান। জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ইলিয়া সোমিন বলেছেন, “এই ঘটনায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পংক্তিটি পরিষ্কার। “হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবেন।”
তবে যাই ই হোক না কেন, এই মূহুর্তে ট্রাম্পের যদি সংক্রমণ হয় তাহলে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক ঝুঁকির চেয়ে জনগণের আস্থা কমিয়ে দিয়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেবে।
যদিও হোয়াইট হাউসের পশ্চিম ভাগে এখনো পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গত ১১’ই মে। আর তাও ছড়িয়েছিল সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে আগ্রহী, সম্ভবত তিনি জানেন যে এই সংক্রমণ তাঁর পুনর্নির্বাচনের আশা কেড়ে নিতে পারে।
যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন যে পেন্সের সাথে তার সাম্প্রতিক কোন যোগাযোগ ছিল না, তবে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের থেকে যে দূরত্ব বজায় রাখছেন সেটাও জানাতে ভোলেন নি। ট্রাম্প আরো বলেন যে তিনি হোয়াইট হাউজের সকল কর্মীদের জন্য একটি আদেশ জারি করেছেন যাতে সকলেই ফেস মাস্ক পরা শুরু করে। এতে হোয়াইট হাউসের পশ্চিম ভাগের ভেতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যায়। কিন্তু এই পদক্ষেপেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা আছে। এই নির্দেশ প্রেসিডেন্টের জন্যে প্রযোজ্য নয়, কারণ ট্রাম্প এখনোও ফেস মাস্ক পরতে চান না!