দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ভারতেনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং গালওয়ান সংঘর্ষকে “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা” বলে অভিহিত করেছেন। চীন-ভারত ইয়াং ওয়েবিনারে বক্তৃতা দিতে গিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন- “কিছুদিন আগে, সীমান্ত এলাকায় একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে যা চীন বা ভারত কেউই আর ভবিষ্যতে দেখতে চায় না। এখন দুই দেশই এটা সঠিকভাবে সামলানোর জন্য কাজ করছে। এটি ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত।”
উইডং বলেন, “৭০ বছর আগে চীন ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক ধরণের পরীক্ষা সহ্য করেছে এবং আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। একটি ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমে এর মুল্যায়ণ উচিত নয়। এই নতুন শতাব্দীতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এগিয়ে যাওয়া উচিত।”
রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত ছিলেন যে চীন এবং ভারত দুটিই প্রাচীন সভ্যতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সঠিকভাবে পরিচালনা করার জ্ঞান এবং ক্ষমতা আছে। রাষ্ট্রদূত বলেন -“চীন ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বী দের পরিবর্তে অংশীদার হিসেবে দেখে, এবং ‘হুমকি’র পরিবর্তে একটি ‘সুযোগ’। আমরা আশা করি সীমান্ত প্রশ্নটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি যথাযথ জায়গায় থাকবে, আলোচনা এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য যথাযথভাবে মোকাবেলা করা এবং দ্রুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।”
উইডং বলেন যে ভারত এবং চীনের “শান্তিতে থাকা উচিত এবং দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলা উচিত। কোন দেশকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না এবং নিজে থেকে উন্নয়ন অনুসন্ধান করা যাবে না। আমাদের শুধু স্বনির্ভরতা মেনে চলা উচিত নয়, বিশ্বায়নের প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বহির্বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করাও উচিত। এভাবেই আমরা উন্নত উন্নয়ন অর্জন করতে পারি।”
চীনা রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন যে চীন ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা অত্যন্ত শক্তিশালী। “চীন অনেক বছর ধরে ভারতেরবৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, অন্যদিকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনা এবং ভারতের অর্থনীতি পরস্পরবোনা এবং পরস্পরনির্ভরশীল। আমি মনে করি চীন এবং ভারতের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির একে অপরকে চুম্বকের মত আকৃষ্ট করা উচিত, জোর করে তাদের আলাদা করার বদলে।”
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে মানুষ থেকে মানুষ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ভাষা শেখা অপরিহার্য, যা “উপেক্ষা করা যায় না, এখন রাজনীতি করা উচিত নয়”।
উল্লেখ্য ফিঙ্গার এরিয়া, গালওয়ান উপত্যকা, হট স্প্রিংস এবং কংরাং নালা সহ একাধিক এলাকায় চীনা সেনাবাহিনীর সীমালঙ্ঘন নিয়ে এপ্রিল-মে মাস থেকে ভারত ও চীন অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। গত তিন মাস ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে পাঁচটি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের আলোচনা চলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফলাফলে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। চীনা সেনাবাহিনী ফিঙ্গার এলাকা থেকে পুরোপুরি সরে যেতে বা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে অসম্মতি জানিয়েছে এবং মনে হচ্ছে সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইছেই না।
যখন চলমান সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা চলছে, ভারতও পূর্ব লাদাখের ফিঙ্গার এলাকা থেকে সমানভাবে বিচ্ছিন্ন করার চীনা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এই মাসের শুরুতে চীন আশা প্রকাশ করেছিল যে ভারত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটকে “উদ্দেশ্যমূলক এবং ন্যায্য উপায়ে” বিবেচনা করবে। এক বিবৃতিতে চীনা দূতাবাস ভারতকে স্বাভাবিক সহযোগিতার রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে এবং চীনেরসুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখতে বলেছে। ভারত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের স্থানীয় অধ্যায় এবং ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে চুক্তির ব্যাপক পর্যালোচনা শুরু করার পর এই মন্তব্য করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গলওয়ান সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ভারত ইতিমধ্যেই চীনের ওপর ডিজিট্যাল ও ফিজিক্যাল ট্রেড এই দুই উপায়েই বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষ চুক্তি চাপিয়েছে যার ফলে চীনের বাণিজ্য এখন অনেকটাই কোনঠাসা। এই পরিস্থিতিতে চীনা রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্য বেজিং এর ঘুরিয়ে ভারত বন্দনাই বলতে চাইছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।