দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ হ্যাঁ ঘরে ফিরছে তারা। গত ১৭ মাস ধরে চীনের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে অবশেষে তারা বাসস্থানের পথে পা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা। গত কয়েক মাসে সোশ্যাল মিডিয়াতে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল চীনের বিপন্ন প্রজাতির ১৪ জনের একটি হাতির দল।
২০২০ সালের মার্চ মাস নাগাদ চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ‘শিশুয়াংবান্না ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভ ‘ নামের সংরক্ষিত অরণ্য এলাকাতে বসবাস করা হাতির দলটি বাসস্থান ছেড়ে চীনের উত্তর দিকে চলতে শুরু করে। তারপরে গত কয়েক মাসে ভ্রান্তিকর ভাবে তাদেরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বিভিন্ন নগর ও শহরের মধ্য দিয়ে। চলার পথে তারা ফসলের ক্ষেত্র মাড়িয়েছে, মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, দোকান বাজার তছনছ করে খাবার সংগ্রহ করেছে। হাতিদের বাসস্থান ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয় ঠিকই, তবে তারা কখনোই বাসস্থান থেকে বেশি দূরে কোথাও যায় না, আবার ফিরেও আসে তাড়াতাড়ি তবে এহেন আচরণ হাতি বিশারদদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে তারা হাতির দলের এমন আচরণের কারণ সঠিকভাবে কিছু নির্ধারন করতে পারে নি এখনও।


তারা ধারণা করছে এর সঙ্গে অবশ্যই খাদ্য, জল ও বাসস্থানের সংযোগ আছে। তবে তাদের আসল লক্ষ্য কি তা এখনো অজানা। হান্টার কলেজের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক অধ্যাপক জশুয়া প্লটনিক বিবিসিকে একথা জানিয়েছেন তিনি আরও বলেন যেসব অরণ্যে এশিয়ান হাতিরা বাস করে সেই সব বনাঞ্চলে মানুষের যাওয়া আসা, কর্মকাণ্ড এখন অনেক বেড়ে গেছে। তাই তাদের বাসস্থানের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তারা বড় দলে থাকতে পারছে না, তাদের খাদ্যে টান পড়েছে, শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে, হাতিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে।
জাম্বিয়ার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা, গেম রেঞ্জার্স ইন্টারন্যাশনালের ‘লিসা অলিভিয়ের ‘ বিবিসিকে জানিয়েছেন এই হাতির দলটির আচারন অস্বাভাবিক। চীনা সরকার ড্রোন দিয়ে হাতিদের গতিবিধির উপর 24 ঘন্টা খেয়াল রাখছিল, তার ফুটেছে ধরা পড়েছে যে হাতিরা মাটিতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। সাধারণত বাচ্চা হাতিরা মাটিতে শুয়ে ঘুমালেও বড় হাতি গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে ঘুমায়। তিনি আরো বলেছেন হাতিরা সাধারণত খুব ঘরোয়া তাদের জীবন নিয়মের ছকে বাঁধা, বাচ্চা প্রসবের সময় তারা বাসস্থান ছেড়ে কোথাও যায় না নিরাপদ স্থানে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এই দলটির দুটি মা-হাতি যাত্রাকালে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে যা বিস্ময়কর।


হাতিদের প্রতিদিন পেট ভরতে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোগ্রাম পরিমাণ খাবার সংগ্রহ করতে হয়। পৃথিবী জুড়ে হাতিদের জীবন বিপন্ন। তবে যে কটা স্থানে হাতিদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, তার মধ্যে চীন একটি। তারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ভাল উদ্যোগ নিয়েছে ফলে ১৯৯০ সালে যেখানে ১৯৩ টি হাতি ছিল এখন সেই সংখ্যাটা ৩০০ তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কৃত্রিমভাবে চীনে হাতিদের জন্য যে বাসস্থান, জলাশয় বা খাদ্য ভান্ডার তৈরি করা হয়েছে তা প্রাকৃতিক বাসস্থানের চাহিদা পুরোপুরিভাবে মেটাতে পারছে না। আবার বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় তাদের খাদ্যে টান পড়েছে। হয়তো সে জন্যই তারা নতুন উৎসের সন্ধান করছে।
চীন সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলির সাহায্যে, প্রচুর খরচসাপেক্ষ হওয়া সত্বেও সেনা মোতায়েন করা থেকে ড্রোন দিয়ে নজর রাখা, ট্রাক দিয়ে পথ আটকানো এবং খাবার ছড়িয়ে হাতির দলকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রচেষ্টা তারা গ্রহণ করেছিল সবই প্রশংসনীয়। স্বস্তির বিষয় এটাই যে অবশেষে তারা আবার তাদের বাসস্থান এর দিকে ফিরে আসছে। শেষ খবর অনুযায়ী তারা এখনো দুশো কিলোমিটার দূরে আছে। এই পুরো ঘটনাই বিশ্বব্যাপী হাতিতের দুর্দশা দেখে মানুষ সচেতন হবে, তা আশা করা যায়।
লেখা – তানিয়া তুস সাবা