দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সাত দশক আগে চীনা লিবারেশন আর্মির তিব্বত দখল অভিযানকে ‘শান্তিপূর্ণ মুক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। এর পাশাপাশি শনিবার একদলীয় শাসনাধীন চিনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা, সুস্থিতি বজায় রাখা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে তিব্বতকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হবে।”
তিব্বত দখলের সাফাইও দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। তাঁর মতে ১৯৫০ সালের অক্টোবরের গোড়ায় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে তিব্বতের জনগণকে মুক্তি দিতেই অভিযান চালিয়েছিল লাল ফৌজ। যদিও তিব্বতের ইতিহাস অন্য কথা বলছে। তিব্বতের ইতিহাসে দলাই লামা-সহ বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের নিয়ন্ত্রণে কখনো কোনো বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়নি। একদা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রটিতে যাবতীয় অশান্তির সূত্রপাত করেছে চীন। দিনের পর দিন বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের ওপর অত্যাচার তিব্বতের মানুষের মনে তীব্র চীন বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে।
‘সামন্ততন্ত্র’ থেকে তিব্বতকে মুক্ত করার দাবি যে ফেক সেটা বেজিং বৌদ্ধ আমজনতার হাবে ভাবেই বুঝতে পেরেছে। আর সেটা শি জিংফিং তাঁর বক্তৃতাতেই সেটা স্পষ্ট করেছেন। নিজেদের গা জোয়াড়ি লুকোনোর জন্যে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের তিনি বলেছেন, ‘‘তিব্বতের প্রতিটি যুবকের হৃদয়ের চীনের প্রতি ভালবাসার বীজ রোপণ করতে হবে।’’ আর কিভাবে তা সম্ভব হবে সে পদ্ধতিও বাতলেছেন। তাঁর মতে ‘তিব্বতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক ও আদর্শগত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।’’ অর্থাত্ তিব্বতের মানুষদের মগজ ধোলাইয়ের পথেই হাঁটতে চাইছে চীন।
চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া এই খবর প্রচার করেছে। আর এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি নড়ে চড়ে বসেছে। সংস্থাগুলির আশঙ্কা, চীন অধিকৃত শিনজিয়াংয়ে কমিউনিস্ট নেতৃত্বরা যে ভাবে ‘রাজনৈতিক শিক্ষা’র নামে মুসলিম যুবকদের বন্দি করে মগজধোলাই চালাচ্ছে, এ বার তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলেও সেই নীতিই বলবৎ হবে।
এ প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক জিংপিং গতকাল বলেছেন, ‘‘বৌদ্ধধর্মকে এ বার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে।’’ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার চীনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন তিব্বতি বৌদ্ধ’রা। তিব্বতিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নির্মম ভাবে দমন করেছে লিবারেশন আর্মি এমন অভিযোগও উঠেছে।
শনিবার তিব্বত দখলের ৭০’তম বর্ষপূর্তিতে চীনা প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য বেজিং ও ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এই প্রসঙ্গে গত মাসেই মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেই জানিয়েছিলেন, অধিকৃত তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমনপীড়নে অভিযুক্ত চীনা সরকারি আধিকারিকদের আমেরিকার ভিসা দেওয়া হবে না। ওই সময়ে পম্পেই এর ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিল চীন। এখন নতুন করে এই পরিকল্পনা, আবার তিব্বতের অবহাওয়া বারুদ-রক্তর গন্ধে ভরাবে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।