দ্য ক্যালকাটা মিরর: আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্মানে আগামী বুধবারটি অর্থাত্ ২’রা সেপ্টেম্বর তারিখটি রাষ্ট্রীয় শোকদিবস পালন করা হবে। ওই দিন অর্ধনমিত থাকবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। গতকাল রাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে এই সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপ্ত সহায়ক।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রাক্তন তথা প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতির স্মৃতির উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আপনজন হারাল।’ সেই সাথে শেখ হাসিনা প্রণববাবুর সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবার ও তাঁর ব্যক্তিগত বহু স্মৃতির কথা স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনার বলেন, ‘প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে ভারত একজন অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে হারাল। আর বাংলাদেশ হারাল একজন আপনজনকে।’
এই শোকবার্তায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনন্য অবদান কখনও বিস্মৃত হওয়ার নয়। আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থন করে জানান- ১৯৭৫ সালের ১৫’ই অগস্ট ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত হন শেখ হাসিনার পরিবার। সেই সময়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমনকী সেই দুঃসময়েও তিনি তাঁর পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন। যে কোনও প্রয়োজনে প্রণব বাবু পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর দেশে ফেরার পরেও প্রণব মুখোপাধ্যায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। উৎসাহ দিয়েছিলেন। এমনকী যখনই শেখ হাসিনা সংকটে পড়েছিলেন প্রণব বাবু সাহস জুগিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা প্রণববাবু কে নিজের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রণববাবু উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই বেঁচে থাকবেন বলে অভিমত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আবদুল হামিদও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনিও সোমবার এক শোকবার্তায় বলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। তিনিও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা বাংলাদেশের বিজয়কে কতটা ত্বরান্বিত করেছিল সে বিষয়ে বিশেষ আলোকপাত করেন। তাঁর মতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক আঙিনায় জনমত তৈরিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভোলার নয়।
তিনি মনে করিয়ে দেন যে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনিও প্রবীণ নেতার শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারত রত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়। গত ১০’ই আগস্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। কিন্তু, সেই অপারেশনের পর পরই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে থাকে আর এর পাশাপাশি তিনি কোভিড পজিটিভ হওয়ায় আর শেষ রক্ষা হলো না। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮8 বছর। তাঁর ছেলে অভিজিত এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা আমৃত্যু তাঁর পাশেই ছিলেন।