দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:বিশ্বের মানচিত্রে চীন ক্রমশ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! হেনো ভয়ংকর রোগ নেই যার আঁতুড় ঘর এই চীন। দেশের সরকার একদিকে যেমন অন্য দেশের জমিতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আগ্রাসী মনভাবের পরিচয় দিচ্ছে অন্য দিকে দেশের মানুষের সর্বভূখ খাদ্যাভাস বিশ্বকে আশঙ্কায় রাখছে নিত্যনতুন রোগ নিয়ে এসে। এবার কোভিড অতিমারীর মাঝেই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের শিকার কয়েক হাজার মানুষ।
ও দেশের আঞ্চলিক প্রশাসন সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে কোভিড আবহের মাঝেই চীনে এবার হানা দিয়েছে ব্যাক্টেরিয়াজাত রোগ ব্রুসেলোসিস। উত্তর-পশ্চিম চিনের ল্যানঝৌ শহরে কয়েক হাজার মানুষ এই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি এই রোগ মূলত: খাদ্য ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানবশরীরের প্রবেশ করেছে। গবাদি পশুর দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া এবং কাঁচা মাংস থেকেই এই রোগ ছড়িয়ে পরে।


কী হয় এই রোগে? এই রোগ প্রসঙ্গে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, ব্রুসেলা ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে মাল্টি ফিভার বা মেডিটেরেনিয়ান ফিভার নামে এক রকম জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। এই রোগের প্রধান উপসর্গ মাথাব্যথা, পেশির যন্ত্রণা, প্রবল জ্বর ও ক্লান্তি ভাব। সিডিসি এও জানিয়েছে যে উপসর্গের উপশম হলেও রোগের জেরে শরীরে স্থায়ী আর্থ্রাইটিস ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুলে যেতে পারে।
তদন্তে জানা গিয়েছে ২০১৯ সালেই এক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার কারখানা থেকে এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছিল। এই প্রসঙ্গে চিনের গ্যানসু প্রদেশের ল্যানঝৌ পশুরোগ গবেষণা কেন্দ্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গবাদি পশুর থেকেই এই রোগের ব্যক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটে প্রতিপালক মানুষের শরীরে। এই মূহুর্তে ওই অঞ্চলে ব্রুসেলোসিস মহামারী রুখতে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।


ওই গবেষণা কেন্দ্র একটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত করেছে। যা থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২১,৮৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪,৬৪৬ জন ব্রুসেলোসিস পজিটিভ এবং আরও ৩,২৪৫ জন স্বল্প সংক্রমিত রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই পরিসংখ্যান আরও জানাচ্ছে যে মোট ৩,১৫৯টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ফাইল তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রসংখ্যানে এই দেখানো হয়েছে যে, এই রোগের জন্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে ২৩,৪৭৯ বার। এছাড়াও ও ফ্যাক্টরি অঞ্চলে এখনো অবধি ৯টি স্বাস্থ্য শিবিরে স্পটেই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
ওই অঞ্চলের গবেষক দলের তদন্তের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী, ল্যানঝৌ বায়োফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে গ্যাস লিক করার ফলেই এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। আসলে ওই কারখানায় ব্রুসোলিস রোগের টিকাও উৎপাদন করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই থেকে ২০ অগস্টের মধ্যে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া টিকা থেকে নতুন ব্রুসেলা ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়ায় নির্গত বর্জ্য গ্যাসের অসম্পূর্ণ জীবাণুমুক্তিকরণের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। জীবাণু তৈরির ফার্মেন্টেশনের জন্যে ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক থেকে বের হওয়া তরলের সুবাদেই এই বিপত্তি ঘটে। গবেষণা রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে, ট্যাঙ্ক থেকে লিক হওয়া ও বিষাক্ত তরলের কণা বাষ্প হয়ে বায়ুবাহিত হয়ে মানুষের দেহে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটায়।
উল্লেখ্য, এর আগে সর্বপ্রথম আশির দশকে চিনে ব্রুসেলা মহামারী দেখা দেওয়ার পরে টিকা আবিষ্কার ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের সুবাদে রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে টিকা থাকা স্বত্ত্বেও গত কয়েক দশকে বিক্ষিপ্ত সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল।