দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বাড়ির ছাদে তৈরি হয়েছে বাঁশের ম্যারাপ। পাড়ার লোকের কাছেও খবর আগামী কাল তাঁর শ্রাদ্ধ। এমন সময়ে করোনা জয় করে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে বাড়ি ফিরে এলেন বাড়ির কর্তা শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতাল থেকে ফোনে জানানো হয় তাঁর পরিবারকে। এমনকি কয়েকদিন আগেই যাঁরা শিবদাসবাবুর শেষকৃত্য সেরেছিলেন তারাও বিস্মিত। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে হেঁটে ঘরে ঢুকলেন বিরাটির শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। বিরাটির বিদ্যাসাগর সরণি’র ঘটনা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে হাসপাতালের তরফ থেকে গত ১৩ নভেম্বর শিবদাসবাবুর পরিবারকে জানানো হয় যে, করোনার কারণে মারা গিয়েছেন পরিবারের কর্তা শিবদাস বাবু। হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে করোনা বিধি মেনে তাঁর সৎকারের কাজও সারা হয়ে যায়। এমনকি হাতে চলেও এসেছে ডেথ সার্টিফিকেটও। শনিবার ছিল শ্রাদ্ধ। আর তার ঠিক আগের রাতেই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে বাড়ি ফিরলেন শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম গাফিতলির চিত্র ধরা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে অন্য এক ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যাদের ‘আত্মীয়’ কে মৃত শিবদাস বাবু বলে চালানো হয়েছে।
খড়দার বলরাম বসু সেবামন্দির কোভিড হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে ঘটনাটির সূত্রপাত ৪ নভেম্বর। ওই দিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন বিরাটির বাসিন্দা শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও খড়দার বাসিন্দা মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়। সেদিন রাতেই বারাসতের GNRC কোভিড হাসপাতালে ২ জনকে রেফার করা হয়। তবে সঙ্কটজনক অবস্থা থাকায় শুধুমাত্র মোহিনীমোহনকেই বারাসতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের ভুলেই মোহিনীমোহন বাবুর সঙ্গে চলে যায় শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত নথি।
আর বারাসাত কোভিড হাসপাতালে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয়ে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে থাকেন মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়। আর ১৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হলে সেই খবর যায় শিবদাসবাবুর বিরাটির বাড়িতে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা মোহিনীমোহনের দেহ সৎকার করেন। এদিকে, ২০ নভেম্বর, শুক্রবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পান শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে মোহিনিমোহন বাবুর পরিবারের তরফে বলা হয়েছে যে মোহিনীমোহন বাবু কে শিবদাস বাবুর ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে যা খুনের থেকে কোনও অংশে কম কিছু নয়। যদিও এ ঘটনায় খড়দার কোভিড হাসপাতালের কর্মীদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। এই অমার্জনীয় ত্রুটির বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্য ভবন। গঠন করা হয়েছে ৪ সদস্যের এক তদন্ত কমিটিও। তবে আরও গুরতর অভিযোগ যে ঘটনার কথা প্রকাশ্যে না আনার জন্য দুই পরিবারকেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়।