দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হাসপাতাল সূত্রের খবর, গভীর রাতে জ্ঞান ফিরেছে তাঁর। এই মুহূর্তে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ড বসেছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শরীরে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, পালস, প্রেশার ইত্যাদি সব নর্মাল রয়েছে, তবে সবই ওষুধ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসায় মাধ্যমে স্বাভাবিক রয়েছে। ডাক্তারদের মতে, অত্যন্ত সঙ্কটজনক থেকে এখন তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। অতি সঙ্কটজনক অবস্থাতে গতকাল সকালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গতকালই জানা গিয়েছিলো COPD ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই বর্ষীয়ান কমরেড তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভেন্টিলেশনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমানো হবে। তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্টে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৪২% এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৬২%। এবং স্বস্তির খবর তাঁর কোভিড টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ।
আরও পড়ুন: COPD সমস্যা বাড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু বাইরের কাউকেই তা বুঝতে দেন। কয়েকবছর আগে অসুস্থ হওয়ার পর তার ছবি প্রকাশ্যে আসায় চমকে উঠেছিল বাংলা। অসুস্থাতার কারণে মুখের রঙ পর্যন্ত বদলে গিয়েছিল। তাঁকে আসলে এ অবস্থায় কখনও দেখেনি রাজ্যবাসী। চোখ ভিজেগিয়েছিল অনুগামীদেরও। সম্প্রতি তাঁর শারীরিক অবস্থা কথা খোঁজ নিতে তাঁর বাড়িতে সস্ত্রীক গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গতকাল তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পড়ে নিজে গিয়ে দেখেও এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বিগ্ন কন্যা সুচেতনার কাঁধে হাত রেখে ‘ভরসা’ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে নতুন করে শ্বাসকষ্ট বাড়ায় কোনও রমকম ঝুঁকি না নিয়ে ব্যক্তিগত চিকিত্সকের পরামর্শে তাকে আলিপুরের উডল্যান্ড নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যেতে বুদ্ধবাবুকে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রেখে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বরনর চেষ্টা করা হচ্ছিল। তিনি গতকাল দুপুর থেকে সংজ্ঞাহীনই ছিলেন। আজ ভোরে তাঁর চেতনা ফিরে আসে। গতকাল আইসোলেটেড ক্রিটিক্যাল কেয়ার কেবিনের অন্তর্গত ৫১৮ নম্বর বেডে বুদ্ধদেবকে দেখে নেমে এসে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, তিনি বাইরে থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ভিতরে যাননি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক, পেশায় চিকিৎসক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘অক্সিজেনের মাত্রা কম ছিল, চিকিৎসকরা স্বাধীন ভাবে যা করার করবেন।’
অন্যদিকে কাল রাতের দিকে জগদীপ ধনখড় ও বুদ্ধবাবুকে দেখতে হাসপাতালে যান। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে ফোন করে সীতারাম ইয়েচুরি-সহ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেন। এদিকে হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু জানান যে গতকাল অক্সিজেন থেরাপির পরও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৭০% হয়ে যাওয়ায় ভেন্টিলেশন দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই মাস্কের সাহায্যে সাধারণ বাইপ্যাপ বা ‘পজিটিভ প্রেশার’ ভেন্টিলেশন দেওয়া হয় তাঁকে। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে তাতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে ৯৫% হয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রার উন্নতি হয়নি। বরং ৮৮ থেকে বেড়ে একসময় তা ১৩১ হয়ে যায়।