দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কোভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। মানুষ রামের মন্দিরে দিয়েছে তালা, মসজিদে ঝুলিয়েছে পর্দা। আর সেই মূহুর্তে মানুষের মাঝেই ঈশ্বর হয়ে দেখা দিয়েছেন ডাক্তার, নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। তেমনই এক লড়াকু ডাক্তার হলেন ফুয়াদ হালিম। না তিনি রাম নন, তিনি বাম নেতা তথা জনতার ডাক্তার বলেই খ্যাত।
বুধবার এই বাম চিকিৎসক নেতার স্ত্রী সায়রা শাহ হালিম ফুয়াদের অসুস্থতার বিষয়ে ট্যুইট করেন। লেখেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম সারির যোদ্ধা হওয়ায় এবং লকডাউনে অসংখ্য গরিব মানুষের দেখভাল করেছেন তিনি। আমার স্বামী চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভরতি করা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে। তাঁকে আইসিইউ’তে ভরতি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওনার জন্যে সকলে প্রার্থনা করুন।’
নার্সিংহোম সুত্রে খবর তাঁর দুবার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু দুবারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তৃতীয় বারের জন্যে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে যে ডাক্তারবাবুর ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধছে। তৃতীয় কোভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। এই রক্ত জমাট বাঁধার জন্যে তাঁর পৃথক একটি টেস্ট করা হয়েছে। অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গোটা দেশ তথা এ রাজ্যেও যখন লকডাউন, তখন তিনি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। তখনও গরিব-অসহায় রোগী দেখতে ব্যস্ত ছিলেন ফুয়াদ। তাঁর নিজের তৈরি ‘স্বাস্থ্য সংকল্প’ হাসপাতালে হাজার-হাজার মানুষের ডায়ালিসিস, তাঁদের দেখভাল করতে ছুটে বেরিয়েছেন তিনি। ফিরে যেতে হয়নি কোনও গরিব মানুষকে।
গোটা রাজ্যে একমাত্র তাঁর তৈরি হাসপাতালেই মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস হয়। দিনকয়েক আগেই ফুয়াদের শরীরে করোনার কিছু সংক্রমণ দেখা দেয়। জ্বর আসে, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে হোম আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভরতি করতে হয় হাসপাতালে।
গত লোকসভা নির্বাচনে হেভিওয়েট ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ফুয়াদ। কিন্তু বিপুল ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তবে রাজনীতির ময়দানে হেরে গিয়েও জনতার মনে বরাবরই জিতে এসেছেন ফুয়াদ।
রাজনীতির বাইরে গিয়ে নতুন ভাবনা ভেবেছেন তিনি। করোনা-লকডাউনে যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তখন আস্থা জুগিয়েছে তাঁর ‘স্বাস্থ্য সংকল্প’ হাসপাতাল। মাত্র ৫০ টাকায় সাধারণ মানুষের ডায়ালিসিস করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এবার নিজের শরীরই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। জনতার ডাক্তারের আরোগ্য কামনা করছেন বহু মানুষ। তারা চাইছেন ডাক্তার বাবুর তৃতীয় রিপোর্ট ও নেগেটিভ আসুক। ডাক্তার বাবু আবার সুস্থ হয়ে হাল ধরুন গরীব মানুষের স্বাস্থ্য রথের।