দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা আবহে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন ধারণের পদ্ধতি, এখন মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস না থাকলেই নয়। মানুষের এই বদলে যাওয়া বরাবরই স্থান পেয়ে এসেছে পটুয়া’র হাতের স্পর্শে, স্বর্ণকারের ফুত্কারে। হ্যাঁ, ঠিক সেই প্রথাই অব্যহত রইল এইবারেও। আনন্দনগরী কলকাতার শিয়ালদহের দত্ত বাড়ির পুজোতে এ বার প্রতিমার মুখ ঢাকা থাকবে মাস্কে। ‘সোনার তৈরি মাস্ক’ এ।
এ বছর ‘নিউ নর্মাল’-এর অঙ্গ হিসেবে সেই তালিকায় সোনার মাস্ক বা গ্লাভসও ঢুকে পড়বে কি না, তা বুঝে উঠতে পারছেন না পুজো উদ্যোক্তারা। মায়ের দশ হাতে সোনার অস্ত্র। সঙ্গে সোনার চোখ, মুকুট, নথ, গয়না সব মিলিয়ে প্রতিমার জন্য অন্তত পঞ্চাশ খানেক গয়না থাকে প্রায় সব পুজো কমিটিরই। কিন্তু নতুন গয়না ওই মাস্ক।
উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়ির সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যেরা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে, তাঁদের প্রতিমার মুখে থাকবে মাস্কে। আর সেই জন্য তারা ৪১.৮ গ্রামের একটি রুপোর মাস্কও বানিয়ে ফেলেছেন। সোমবার, শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে সেই মাস্ক পরা দুর্গা প্রতিমার মুখ সামনে রেখেই তাঁদের খুঁটি পুজো হয়েছে।
উল্লেখ্য ওই খুঁটি পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মান্টা মিশ্র। তিনি বলেন, “এ বার আমাদের ৮৭তম বছর। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই এখনও উদাসীন। দেবীর মুখে মাস্ক দেখে যদি তাঁদের হুঁশ হয়!”
তবে এ বিষয়ে গত ১৪ আগস্ট সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় তড়িঘড়ি মাস্ক বানিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতার কোনও স্বর্ণকারকেই তখন পাওয়া যায়নি। শেষে বেলঘরিয়ার এক স্বর্ণকার এই রুপোর মাস্কটি বানান। মিশ্র বাবুর দাবি, “একটি মুকুট থেকে এই রুপোর মাস্কটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা মনে করছি, মুকুট নয়, মাস্কই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।”
রীতিনীতি মেনে অন্য গয়নার মতো বর্ধমানের এক স্বর্ণকারকে মাস্কের বরাতও দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ওই বাড়ির এক সদস্যা দিশা দত্ত। ওই তরুণী বলেন, “আমাদের ১৬০ বছরের পুজো। মাস্ক নিয়ে সকলে রাজি থাকলেও আমাদের ৭২ বছরের ঠাকুরমা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করান। সামনের মাসেই প্রতিমার মাস্ক চলে আসবে।”
২৫৮ বছরের পুরনো আমহার্স্ট স্ট্রিটের চন্দ্রবাড়ির পুজোতেও প্রতিমাকে মাস্ক পরানোর কথা ভাবছেন ওই বাড়ির সদস্যেরা। বাড়ির অন্যতম সদস্য, পেশায় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বললেন, “মানুষকে সচেতন করতে দুর্গাপুজোর থেকে বড় মঞ্চ হয় না। তাই প্রতিমাকে মাস্ক পরানো হলে দর্শনার্থীদের কাছেও দারুণ বার্তা দেওয়া যায়।”
যদিও এই প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন শোভাবাজার নন্দনবাড়ির সেবায়েত অতনু দত্ত। তাঁর কথায়, “প্রতিমা কি মানুষের মতো হাঁটে! যদি হাঁটত, মাস্ক পরাতাম। ১২০ বছরের পুজো, অনিয়ম করা যাবে না।”