দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কি ভাবছেন করোনা চলে গেলেই স্বস্তি? কিন্তু দিন দিন যেমনভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তাতে এতো সহজে মহামারী মিটে যাবে সে আশা করাটা সঠিক নয়। বিগত ছ’মাস ধরে করোনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যবাসী। একটু একটু করে দাপট বাড়াচ্ছে করোনা। প্রতিদিনই রাজ্য সহ গোটা দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সারা বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ভারতেও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মৃত্যুর হার এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিন্তু এরই মধ্যে চিন্তা বাড়াচ্ছে নতুন শিশু রোগ “কাওয়াসাকি’ ও ‘MISC’।
এই নতুন উদয় হওয়া ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও শিশুদের মধ্যে নানান সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া ওঠা, হাতের তালু বার বার ঘেমে ওঠা, শরীরে লালচে র্যাশ, কঞ্জাংটিভাইটিস, ঠোঁট এবং জিভে প্রদাহ বা জ্বালা-র মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে শিশুদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে রক্তের শিরা ও ধমনীর মাধ্যমে’। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘কাওয়াসাকি'(Kawasaki disease) ডিজিজ। যদিও কলকাতায় এই রোগ নতুন নয়। গত বছরও কলকাতায় কাওয়াসাকি ডিজিজ এর কথা শোনা যায় কিন্তু এবার চিন্তা বাড়িয়েছে এই রোগের সহযোগী আর এজটি রোগ যার নাম MISC নিয়ে। এই দুই রোগ মূলত পাঁচ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মধ্যেই দেখা দেয়।
সম্প্রতি পুনের ভারতী বিদ্যাপিঠ হাসপাতালে এমন বেশ কয়েকটি কেস সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন বা ইতালিতেও করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর শিশুদের মধ্যে এই সব সমস্যা দেখা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘এ ক্ষেত্রেও উপসর্গগুলি অনেকটাই এই কাওয়াসাকি ডিজিজের মতো’। কাওয়াসাকি ডিজিজে আক্রান্ত শিশুর জ্বর অন্তত ৫-৬ দিন থাকে। সেই সময় এর সাথে সাথে অন্য সমস্যাগুলিও দেখা দিতে পারে।
রাজ্যে এবার প্রথম রিপোর্ট পাওয়ায় গিয়েছে হুগলির আরামবাগে। ওই বাসিন্দা পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মচারী, তাদের প্রথম সন্তাননের জন্ম হয় ইএম বাইপাস সংলগ্ন মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু বাড়ি ফিরে যাওয়ার ৩ মাস পর থেকে মাঝে মধ্যেই জ্বর আসছিল শিশুটির। এলাকার চিকিৎসককে দেখানো হয়। তবে জ্বর কমছিল না কিছুতেই। শেষমেশ ২’রা মে আবার প্রবল জ্বর আসায় ওই দম্পতি দেরি না করে বাইপাইসের ওই হাসপাতালেই শিশুটিকে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে শিশুটির শরীরে গোল চাকা চাকা দাগ দেখতে পান চিকিৎসকরা। সারা শরীরে র্যাশ বেরিয়েছিল শিশুটির। চার মাসের ওই শিশুটির চোখ,জিভ, ঠোঁট রক্ত জবার মতো লাল হয়ে ছিল। কর্তব্যরত শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ‘সৌম্যব্রত আচার্য’ কাওয়াসাকি ডিজিস কে ধরতে পারেন। সাধারণত ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা যায় না। তবে এই শিশুর ক্ষেত্রে এটি দেখা যাওয়ায় চমকে ওঠেন চিকিৎসকমহল।


তবে শুধু কাওয়াসাকি নয় এর পাশাপাশি এবার দাপট MISC-র। এই গত সোমবার ট্যাংরার এক দম্পতির ছোট শিশুটির তীব্র জ্বর, ঠোঁট লাল হয়ে যাওয়ায় তাকে পার্কসার্কাসের ‘ইন্সটিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’- এ নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন যে শিশুটি ‘MISC’ রোগে আক্রান্ত। এই ‘MISC’ এবং ‘কাওয়াসাকি’ রোগের উপসর্গগুলির অনেক মিল হওয়ায় রোগ নিরূপণ করতে প্রাথমিক সময়ে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তাররা বলছেন এই ‘MISC’ -রোগের ফলে শিশুদের হৃদযন্ত্রও বিকল হতে পারে। এখনো পর্যন্ত ইউরোপ,আমেরিকা,উওর আমেরিকা সহ আমাদের রাজ্যের কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর সহ মোট ১০ জেলায় এই রোগ দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে জাপানের ‘টমিসাকু কাওয়াসাকি’ এই রোগ আবিষ্কার করেন বলে এই রোগের নাম ‘কাওয়াসাকি’। তবে কী কারণে এই রোগ হয়, তা নিয়ে এখনও সন্ধান চলছে গোটা বিশ্বে।সাধারণত প্রতি ১০ লক্ষ শিশুর মধ্যে আট থেকে দশ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে এই রোগ আগেভাগে ধরা পড়লে সুস্থ হওয়ার প্রবনতা ১০০% বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই দুই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার বেশ কিছু ঘটনা ‘ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনে’র জার্নালের অনলাইন ভার্সনে’ প্রকাশিত হয়েছে। তবে বিদেশে এই ঘটনার সাক্ষ প্রমাণ থাকলেও এবার সাক্ষী থাকল শহর কলকাতা ও হুগলীও।