দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বাংলার সবচেয়ে পুরোনো সিনেমা হলের নাম জানেন? জানেন কি, কোথায় আছে বা কি অবস্থায় আছে সেই প্রাচীন সিনেমাহলটি? এবার চিনে নিন সেই সিনেমাহলটিকে, আর জেনে নিন তার ইতিহাস:
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক অত্যন্ত পরিচিত নাম হল জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান। তাঁর জন্ম ১৮৫৬ সালে মুম্বাই শহরে। শৈশবে বম্বে রিক্ল্যামেশন ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হওয়ার বহু টাকা নস্যাৎ তাঁর বাবার, আর এর ফলেই তারপর থেকে লেখাপড়া করা হয়ে ওঠেনি জামশেদজি।
সংসারের চূড়ান্ত অভাব ও আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে ১৮৬৮ সালেই মাত্র ১২ বছর বয়সেই প্রপ বয় হিসাবে তিনি যোগ দেন ‘এলফিনস্টোন ড্রামাটিক ক্লাব’-এ। এরপর ১৮৮২ সাল পর্যন্ত এই কাজ করে নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর স্বপ্ন নিয়ে অবশেষে এসব ছেড়ে তিনি করাচির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আর এর ঠিক এক বছর পরে ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করে ম্যাডান করাচী থেকে কলকাতার পথে যাত্রা করেন।
আরও পড়ুন :একসময় রবীন্দ্র সরোবরে চলতো টয়ট্রেন, চিহ্ন আছে সিরাজদ্দৌলারও! জেনে নিন এর অবাক করা ইতিহাস
সেইসময় কলকাতায় মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে কন্ট্রাক্টর হিসাবে তিনি ব্যবসা করেন কিছু বছর। তারপর ওই ব্যাবসার লাভের টাকা দিয়ে তিনি তাঁর প্রথম কর্মস্থান ‘এলফিনস্টোন থিয়েটার কোম্পানি’ কেনেন। আর সেই থেকে শুরু হয় তাঁর এক অনন্য যাত্রা। তারপর ১৯০২ সাল নাগাদ তিনি কলকাতার ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে শুরু করেন বায়োস্কোপ শো দেখানো। আর তাঁর এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও পায়।
বাংলা থিয়েটার জগতে প্রভূত উন্নতি দেখা যেতে থাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। সেই সময়কে সিনেমার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বললেও কম বলা হবে। এরপর ১৯১৯ সাল নাগাদ চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যবসায় নামেন জে এফ ম্যাডান। তখন তিনি ‘ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেড’ নামক একটি যৌথ উদ্যোগ কোম্পানি স্থাপন করেন।সেইসময় ভারতীয় থিয়েটার হাউজে বিরাট প্রভাবশালী ছিল এই কোম্পানি।
আর সেই বছরই তাঁদের প্রযোজনায় তৈরি হয় জনপ্রিয় আদি বাংলা চলচ্চিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’। এই চলচ্চিত্রের রচয়িতা ছিলেন চাম্পেসী উদেশী। এবং পরিচালক রুস্তমজী ধতিওলা। এই সাদা-কালো নির্বাক চলচ্চিত্রটি, সাড়া জাগিয়েছিল বাংলা সিনেমার ইতিহাসে।
এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েক দশক। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ ক্রমশ এগিয়ে গিয়েছে অবসরের দিকে। এদিকে সিনেমা হলের পরিচিত ধারণাও বদলে গেছে অনেকাংশে।সেইসময় শহর জুড়ে তৈরি হতে শুরু করেছে একের পর এক তুলনামূলক আধুনিক সিনেমাহল। আর এই অবস্থায় ১৯৮০ সালে প্রায় ভগ্নদশায় হয় এলফিনস্টোন থিয়েটার হাউজ। আর তখন এই হলের নাম বদলে হয় চ্যাপলিন। আর নতুন নাম নিয়ে বেশ কিছুদিন চলে এই হলটি। জানা যায়, একসময় নাকি এই হলে মহানায়ক উত্তম কুমারের বাবা প্রজেক্টের চালাতেন।
যদিও ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে এসে বন্ধ হয়ে স্ক্রিনিং। দিনের পর দিন একপ্রকার আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকতে থাকতে ক্ষয়ে যেতে থাকে হলটি। অবশেষে ২০১৩ সাল নাগাদ কলকাতা পৌরসংস্থার সিদ্ধান্তে ভেঙে ফেলা হয় সবচেয়ে প্রাচীনতম হলটিকে।
কলকাতার ধর্মতলায় এখনও চ্যাপলিন সিনেমা হলের স্থানটি নিজ নামেই উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। এর আগে এবং পরেও এরকম বহু সিনেমা হলই বন্ধ হ