দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:
ঘোষনা অনুযায়ী সোমবার ছিল সাপ্তাহিক লকডাউন। সূর্যের আলো ফোঁটেনি। অন্যান্য দিন বাবুঘাট বাসস্ট্যান্ডে ভোরবেলা থেকে চায়ের দোকান, হোটেলের উনুনে আগুন জ্বলে, ধোয়া ওঠে। ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় ব্যাস্ততা। ভিন রাজ্য থেকে ভোরে বাস এসে বাবুঘাটে পৌঁছায়। তবে আজ তার অন্যথা হলো লকডাউনের দরুণ সকলেই কম বেশী ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল সকাল পর্যন্ত। সেই সময় একটি বাস এসে বাবুঘাটে পৌঁছায়, আর সাথে পুলিশও এসে সেই বাসটিকে ঘিরে ফেলে সেখানকার থানায় নিয়ে যায়। সিনেমার মত মনে হলেও বাস্তব।
ঘটনাটি হলো, মূলত সমস্তিপুর থেকে এই বাসটি এসে পৌঁছায় বাবুঘাটে। বাসের যাত্রীরা তখন নামার জন্য তাড়াহুড়ো করছিল। কিন্তু সেখানেই দেখা যায় অনিশ্চয়তা। কারণ যাত্রীরা নামার সময় সেখান থেকে উদ্ধার হয় ২১ জন কিশোর।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আগে থেকেই বাবুঘাটে অপেক্ষা করছিলেন ময়দান থানার পুলিশ এবং চাইল্ড হেল্পলাইনের কো-অর্ডিনেটর স্বয়ং। বাসে থাকা দু-চারজন যাত্রী কোনওভাবে নেমে পালিয়ে যায়। এরপরেই দেখা যায় বাসের মধ্যে বেশ অনেক শিশু ঘুম চোঁখে তাকিয়ে রয়েছে। সেই অবস্থায় পুলিশ বাসটি নিয়ে সোজা চলে যায় ময়দান থানায়।এরপরেই ধীরে ধীরে জানা যায় গোটা ঘটনাটা।
পুলিশ জানিয়েছেন, ‘ময়দান থানা এবং চাইল্ড লাইনের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল ভিন রাজ্য থেকে এ রাজ্যে শিশু পাচার হচ্ছে। দশ বছর বয়স থেকে এগারো বছর বয়স অবধি মোট ২১ জন নাবালককে ছিল বাসে। কারা বা কে তাদের এনেছে সেটা অবশ্য ওই শিশুরা জানাতে পারেনি। তবে পাচারকারীদের তিনজনই ছিল যুবক। একজনের নাম মহম্মদ এহেসান (২২ ) বছর, দ্বিতীয় জন মহম্মদ আফজল (২৮) বছর এবং তৃতীয়জন মহম্মদ চাঁদ (২৩)। এদের সবাইকেইপুলিশ গ্রেফতার করেছে।
তবে নাবালক শিশু গুলোকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার সঠিক কোনো উত্তর এখনও পায়নি পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ‘শিশুগুলির বাড়ি মূলত মুঘলসরাই, বেগুসরাই এবং সমস্তিপুর এলাকাতে’। সূত্রের খবর, তাদের পার্কসার্কাস, তপসিয়া, ট্যাংরা এলাকায় রবারের কারখানা ও চামড়ার কারখানায় কাজে লাগানো জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল।
শিশুগুলিকে উদ্ধার করার পর তাদেরকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করায় পুলিশ। এবং সেই সঙ্গে প্রত্যেকের বাড়ির সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় খবর পাঠানো হয়। ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে ওই বাসেই তাদের বাড়িতে পোঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পুলিশ আজ মঙ্গলবার প্রত্যেককে নিয়ে বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। গতকাল রাতে তাদের আলিপুরের একটি আশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।