দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা আবহে মঠ-মন্দির-মসজিদ বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও, বেলুড় মঠ আবাসিক একটি মঠ। আর এবার করোনার ভয়াল অনুপ্রবেশ ঘটেছে বেলুড় মঠ ও মিশনে।
শুধু সংক্রমণ নয় বরং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে ভয়াবহ আকারের দিকে এগোচ্ছে। মঠ সূত্রের জানা গিয়েছে ৫৪ জন সন্ন্যাসী এবং ১৫ জন কর্মী সহ মোট ৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত। একসাথে এতজন সন্ন্যাসী ও কর্মী সংক্রমিত হওয়ায় মঠ কর্তৃপক্ষ চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।
শুধু বৃহত্ আকারের সংক্রমণ নয়, কতৃপক্ষ জানিয়েছেন এখনো অবধি কোভিড-১৯ এর কোপে মিশনের ৩ সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁরা কেউই সংক্রমণের সময়ে বেলুড় মঠে ছিলেন না।
গত জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত বেলুড় মঠ সুরক্ষিত ও করোনাহীন ছিল। কিন্তু এরপর থেকেই মঠের ভেতরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কতৃপক্ষের মতে দেশের বাড়ি থেকে মঠে ফিরে আসা এক কর্মচারী এবং মুম্বই ও কাডাপা সফরে যাওয়া দুই সন্ন্যাসীর থেকেই এই সংক্রমণ মতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সাথে লড়াই করতে বেলুড় মঠ ডাকঘরের পিছন দিকে তিন তলা কোয়ারেন্টাইন হাউস তৈরি করা হচ্ছে। এটি তৈরি করতে খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ভিতপুজোর পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের স্পর্শ করা ইট দিয়েই এই মহামারীর জন্যে নিবেদিত বিল্ডিং এর ভিত গাঁথার সূচনা করেন মঠের প্রবীণ সন্ন্যাসীরা।
উল্লেখ্য, বেলুড় মঠে বয়স্ক ও অসুস্থ সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য রয়েছে আরোগ্য ভবন। কিন্তু করোনা-র মতো সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি এড়িয়ে চলার জন্যে অসুস্থদের থেকে আলাদা একটি আইসলেশন ইউনিট তৈরির প্রকল্প গৃহীত হয়েছে বেলুড় মঠে৷
তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবনে মোট ১০টি বড় আকারের চিকিৎসার পরিকাঠামো সহ হল ঘর থাকবে। প্রাথমিক ভাবে আগামী মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করে ওই ভবন চালু করে দেওয়া হবে।
অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ ঠেকানোর জন্যে মঠ কর্তৃপক্ষ কিছু বিধিনিষেধ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন মঠের ভিতরে ইলেকট্রনের তরঙ্গ প্রবাহিত করা হবে। এই প্রবাহে করোনাভাইরাস বাধাপ্রাপ্ত হবে। মঠের সংক্রমিতদের জন্যে একটি নতুন অ্যাম্বুল্যান্স কেনা হয়েছে। মোট ১৬.৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬৭৫ জন মঠ বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষাতেই ধরা পড়েছে, মঠের মোট ৫৪ জন সন্ন্যাসী এবং ১৫ জন কর্মী পজিটিভ।
উল্লেখ্য পজিটিভ বাসিন্দাদের ১ মাস কোয়ারানটিনে থাকতে বলা হয়েছে সেই সাথে মঠের বাসিন্দাদের ‘ইমিউনিটি’ বাড়ানোর উপযোগী খাদ্য তালিকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে৷
লকডাউনের ৮২ দিন পর, ১৫ জুন শর্তসাপেক্ষে সাধারণ মানুষের জন্য বেলুড় মঠ খুলে দেওয়া হয়। তবে শুধুমাত্র ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের মন্দির বা মূল মন্দির, ব্রহ্মানন্দ মন্দির, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের সমাধি-মন্দির দর্শন করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এতকিছু করেও বেলুড় মঠে সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। তাই ২’রা আগস্ট ফের অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় মঠ। কিন্তু তাতেও যে সংক্রমণ থামেনি তা এই ঘটনায় প্রমানিত।