ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেবলমাত্র বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য, মোবাইল চার্জারের তার জড়িয়ে স্বামী রজত দে কে খুন করেন স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে। আজ বারাসাত আদালতের ফার্স্ট ট্র্যাক থার্ড কোর্টের রায় ঘোষণা হবার পরই কেঁদে ফেলেন দোষী সাব্যস্ত পত্নী অনিন্দিতা পাল দে।
উল্লেখ্য, রজত দে হত্যা কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার বাইশ মাস পর বারাসাত আদালত রায় দানে দোষী সাব্যস্ত হলেন অনিন্দিতা পাল দে । রায় শোনার মুহূর্তের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়ে উচ্চ স্বরে আর্তনাদ ও বিলাপ করতে শুরু করেন রজত দের স্ত্রী। যদিও খুনে অভিযুক্ত হওয়ার পরেও এতদিন জামিনে মুক্ত ছিলেন অনিন্দিতা পাল দে।
প্রসঙ্গত, বাইশ মাসের আইনি যুদ্ধে যিনি ছিলেন ভাবলেশহীন, তিনি বিচারকের রায় ঘোষণা হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জানালেন তিনি নিরপরাধ। এর পরেই নিজের বাবাকে জড়িয়ে বলতে লাগলেন -তাঁর প্ৰিয় গুড্ডু অৰ্থাৎ তাঁর শিশু পুত্রকে এবার কি করে বাঁচানো যাবে? এরপরে যখন তাঁকে থার্ড কোর্ট থেকে পুলিশ জোর করে অনিন্দিতা পাল দে কে বাইরে নিয়ে এলেন , তখন আইনজীবী দের সমস্বরে আওয়াজ উঠল অনিন্দিতার ফাঁসি চাই।
প্রসঙ্গত, আজ দীর্ঘ বাইশ মাসের যুদ্ধ শেষে হাসলেন রজত দে-র বাবা সমীর কুমার দে ও সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী। সমীর কুমার দে পুত্রবধূ অনিন্দিতার ফাঁসি চান। বারাসাত আদালতের থার্ড কোর্টে বিচারক সুজিত কুমার ঝা তাঁর রায়ে জানান, আইনজীবী স্বামী রজত দেকে খুন করার অভিযোগে যাবতীয় তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ভারতীয় দন্ড বিধির ৩০২(খুন) ও ২০১(তথ্য প্রমান লোপাট) ধারায় আদালত দোষী সাব্যস্ত ঘোষণা করছে অনিন্দিতা পাল দে কে। আগামী বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর দোষী সাব্যস্ত হওয়া অনিন্দিতার সাজা ঘোষণা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ নিউ টাউনে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হন হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দে।সে সময় তাঁর ফ্ল্যাটে তাঁর দেড় বছরের শিশু পুত্র কে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন রজত পত্নী অনিন্দিতা।এর পর ডিসেম্বরের এক তারিখ গ্রেপ্তার হন অনিন্দিতা। চলে দীর্ঘ শুনানি পর্ব। একত্রিশ জন সাক্ষী ছিলেন এই শুনানিতে। অবশেষে সোমবার অনিন্দিতা কে স্বামী খুনে দোষী সাব্যস্ত করলো বারাসাত আদালত।
অন্যদিকে,পুত্র কে খুন করার অভিযোগে পুত্রবধূ দোষী সাব্যস্ত হতেই আনন্দে কেঁদে ফেললেন রজত দের বাবা সমীর কুমার দে। সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী জানালেন, বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে সরে যেতে স্বামীকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন পত্নী অনিন্দিতা। স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদে রাজী না হওয়ায় চাদরের ওপর দিয়েই মোবাইল চার্জারের তার জড়িয়ে শ্বাস রোধ করেন স্বামী কে । চৌত্রিশ বছরের লম্বা চওড়া চেহারার রজত কে খুন করে অনিন্দিতা।
অনিন্দিতার পক্ষের আইনজীবী জ্যোতির্ময় অধিকারী জানালেন, আদালতের রায় “ভুল’। তাঁরা “অনিন্দিতার ন্যায় বিচার অর্জন করার লক্ষ্যে ” হাইকোর্ট যাবেন। রজত দের বাবা সমীর কুমার দে জানালেন, মানুষের পর্যায়ভুক্ত নয় অনিন্দিতা। পুত্রবধূকে নারী জাতির কলঙ্ক আখ্যা দিয়ে সমীর কুমার দের বক্তব্য, অনিন্দিতার চরমতম সাজাই প্রাপ্য, সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন তারা।